ফের এনআরসির বিরুদ্ধে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে আবার পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং আবার ঘোষণা করলেন, ‘‘যত দিন প্রাণ আছে, এখানে এনআরসি হতে দেব না।’’ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবারই রাজ্য সরকারকে বন্ধ করতে হয়েছে সিএএ বিরোধী বিজ্ঞাপন। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র দমেননি মমতা। বরং মঙ্গলবারের সভায় স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে যে, ঝাড়খণ্ডে বিজেপির হারে আরও উদ্দীপ্ত মমতা।
মঙ্গলবার স্বামী বিবেকানন্দের ভিটে থেকে বেলেঘাটার গাঁধী ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায় এটা ছিল মমতার চতুর্থ পদযাত্রা। মিছিল শেষ হওয়ার পরে বেলেঘাটায় ভাষণ দেন তিনি। তৃণমূল চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘আমরা কেউ বাংলা ভাগ হতে দেব না। আমরা কেউ দেশ ভাগ হতে দেব না। আমরা হিন্দু-মুসলিম ভাগ হতে দেব না। দেশে শুধু বিজেপি থাকবে, এটা হতে পারে না।’’
সিএএ যে গোটা দেশেই কার্যকরী হবে, সে কথা সোমবারই কলকাতায় এসে জোর দিয়ে জানিয়ে গিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা হুঙ্কারে বললেন— এখানে সিএএ, এনআরসি হবে না। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে এ দিন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘কে করবে এনআরসি? সরকার। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প কে করেছিল? অসমের সরকার। এখানে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই, হবেও না। আমি এক কথার মানুষ। হবে না যখন বলেছি, কিছুতেই হবে না। সে আমার গলা কেটে নিলে নিক।’’ বলেন মমতা।
বিজেপির কার্যকরী সভাপতির নাম মমতার মুখে শোনা যায়নি। কিন্তু শ্যামবাজারের সভা থেকে জে পি নড্ডা গতকাল যে সব ইস্যু তুলে আক্রমণ করেছিলেন তাঁকে, এ দিন সে সবের অনেকগুলিরই পাল্টা জবাব দেন মমতা।
বার বার বড়মা বীণাপাণিদেবীর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন, কিন্তু এখন মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করছেন মমতা— সোমবার এ কথাই বলেছিলেন নড্ডা। এ দিন মমতা পাল্টা বলেন, ‘‘মতুয়া মতুয়া করছো, এত দিন কোথায় ছিলে? বড়মাকে কে দেখেছে গত তিরিশ বছর? বড়মা হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসার খরচটা এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহন করেছে।’’ মতুয়াদের বা উদ্বাস্তুদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কিছু নেই বলে এ দিন ফের দাবি করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষদের বলা হচ্ছে, তাঁরা নাগরিক নন। উদ্বাস্তদের জমির দলিল আমি দিয়েছি।’’
সোমবারের মিছিলে নড্ডা হুডখোলা জিপে চড়েছিলেন। নাম না করে সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘কালকে দেখুন বিজেপি নেতারা এল আর গাড়ি করে ফূর্তি করে মিছিল করে চলে গেল। হাঁটতেও পারে না। হাঁটলে কোমরে ব্যথা হবে, টাটা করে চলে যাচ্ছে।’’ তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে উত্তরপ্রদেশ সরকার লখনউ বিমানবন্দরের বাইরে বেরতে দেয়নি, কিন্তু বিজেপির মিছিলকে কলকাতায় কেউ আটকায়নি— এই দু’টি বিষয় উল্লেখ করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তা হলে আইনের শাসন কোথায় রয়েছে?’’
সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের উপরে গুলিচালনার অভিযোগ নিয়েও এ দিন মমতা সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ক’টা গুলি চলেছে? আপনার ইউপিতে একটা আন্দোলন ট্যাকল করতে পারেন না! ১৬ জনকে গুলি করে মেরেছেন। হাজার হাজার লোক আহত। দিল্লিতে গুলি চলেছে। বেঙ্গালুরুতে গুলি করেছে।’’
গত দু’বছরে কোন কোন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন— ‘স্টেনগান’ চালানোর জবাব দিচ্ছেন জনগণ। ঝাড়খণ্ডে বিজেপির পরাজয়ে যে তিনি অত্যন্ত খুশি, তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে বেলেঘাটার ভাষণে। এ দিনের ভাষণের শেষ দিকে তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি হচ্ছে না। আমাদের যত দিন প্রাণ আছে, এখানে এনআরসি হতে দেব না।’’