রাজ্যে অশান্তির ঘটনায় আবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক থেকে।
রামনবমীতে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছিল হাওড়া এবং হুগলিতে। তার পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রের তথ্যানুসন্ধানী দল (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম)। সেই দলকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে অ্যাম্বুল্যান্স উদ্বোধনের পর সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনায় আবার মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই কেন্দ্রের তথ্যানুসন্ধানী দলকে আক্রমণ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘এলাকা পুরো শান্ত। সেই এলাকা অশান্ত করতে এসেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘খায় না মাথায় দেয়! এটা কাঁচালঙ্কা না লবডঙ্কা! সব ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন, শিশু সুরক্ষা কমিশন!’’
হাওড়ার শিবপুর এবং হুগলির রিষড়ায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল। ওই এলাকাগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত শনিবার রাজ্যে এসেছে তথ্যানুসন্ধানী দল। সেই দলে আছেন পটনা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নরসিমা রেড্ডি-সহ ৬ সদস্য। শনিবার তাঁরা গিয়েছিলেন রিষড়ায়। সেখানে তাঁরা ‘পুলিশি বাধা’র মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। রবিবার তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন হাওড়ার উদ্দেশে। কিন্তু প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোল প্লাজায় কমিটির ৬ সদস্যকে ঢুকতে বাধা দেয় হাওড়া সিটি পুলিশ। তাঁদের জানানো হয়, যেখানে অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেই শিবপুরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলে ঘণ্টা খানেক। শেষ পর্যন্ত অনুমতি না মেলায় কলকাতায় ফিরে আসেন কমিটির সদস্যরা। বাধা পেয়ে নরসিমার অভিযোগ, পুলিশ রাজনৈতিক নেতাদের মতো আচরণ করছে। বিষয়টি তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় দিল্লি থেকে তথ্যানুসন্ধানী দল এসেছিল রাজ্যে। ভোট-পরবর্তী হিংসা এবং বগটুইয়ের ঘটনার পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিল এমনই তথ্যানুসন্ধানী দল। রাজ্যে এই দলের আসার নেপথ্যে বিজেপির ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ বাংলার শাসকদলের একাংশের। কিছু দিন আগে তিলজলায় শিশু খুনের ঘটনার পর রাজ্যে এসেছিলেন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি।
অশান্তির ঘটনা নিয়ে সোমবার আবার বিজেপিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘বিজেপি ইচ্ছাকৃত ভাবে এসব করেছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ধর্মীয় সভায় অস্ত্র কেন নিয়ে যাবে? বন্দুক নিয়ে কেন নৃত্য করবে? বুলডোজার কেন নিয়ে যাবে? অস্ত্র নিয়ে উন্মত্তের মতো নৃত্য করেছে!’’ অশান্তির ঘটনায় হাওড়ায় অস্ত্রহাতে যে যুবককে দেখা গিয়েছিল, পরে বিহারের মুঙ্গের থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘মুঙ্গের থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বাইরের লোক। আমাদের এখানকার লোকেরা সবাই একসঙ্গে থাকেন। অশান্তি করেন না। প্রথম দিকে ওরা এত অস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছিল যে, পুলিশ যদি দু’পক্ষকে আটকাত, তা হলে অনেকে গুলিতে মারা যেতেন। পুলিশ কৌশলে পদক্ষেপ করেছে।’’
পক্ষান্তরে, অশান্তির ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার খেজুরির সভায় বিরোধী দলনেতা বলেন, অশান্তির জন্য তৃণমূলই দায়ী। অশান্তির ঘটনায় এনআইএ তদন্তের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু। ওই মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে আদালত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের অবশ্য পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের প্রয়োজন। যা থেকে বিরোধী শিবির আশাবাদী যে, এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে হাই কোর্ট।