Balurghat Dandi Controversy

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সাজা দণ্ডি কাটানো! জাতীয় রাজনীতির নজর কাড়তে জোড়া চিঠি সুকান্তের

রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি জাতীয় তফসিলি জনজাতি কমিশনের চেয়ারপার্সনকেও চিঠি লিখেছেন সুকান্ত। দক্ষিণ দিনাজপুরের ঘটনায় অনুসন্ধান এবং কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৫৭
Share:

দণ্ডিকাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে আসা ৪ আদিবাসী মহিলাকে দণ্ডি কাটানোর বিষয়টিকে জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হল গেরুয়া শিবির। বিষয়টি চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে জানালেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আগামী দিনে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে এমন আচরণ যাতে আর না করা হয়, সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চেয়ে সোমবার রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে প্রায় ২০০ জন মহিলা তাঁদের পরিবার-সহ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এর পর ফের তৃণমূলে ফিরে আসায় তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করাতে দণ্ডি কাটানো হয়। ওই ৪ জন মহিলা তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের। এ নিয়েই আদিবাসী সমাজের প্রতি বাংলার শাসকদলের ‘নিম্নরুচির মানসিকতা’ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে দেশের রাষ্ট্রপতি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি। অতীতে তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। তাঁর মন্ত্রিসভার এক সদস্যের এ হেন মন্তব্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজেই এই পর্বে দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতিকে সুকান্তের চিঠি রাজনৈতিক দিক থেকে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।

রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো চিঠিতে সুকান্ত লিখেছেন, ‘‘যন্ত্রণার সঙ্গে একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আপনার কাছে তুলে ধরছি। আমার লোকসভা কেন্দ্র বালুরঘাটের অন্তর্গত তপন বিধানসভা এলাকায় আদিবাসী পরিবারের প্রায় ২০০ জন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এটা ভাল চোখে দেখেননি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তৃণমূলের গুন্ডারা ভয় দেখিয়ে জোর করে তাঁদের আবার তৃণমূলে যোগদান করিয়েছে। এটা যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হত, তা হলে আমাদের কিছু বলার ছিল না। কিন্তু অমানবিক ভাবে জোর করে তাঁদের দণ্ডি কাটতে বাধ্য করা হয়েছে।’’ এর পরেই চিঠিতে সুকান্ত লিখেছেন, ‘‘অতীতের বিভিন্ন ঘটনাবলি এবং নানা মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে, আদিবাসীদের প্রতি তৃণমূলের নেতাদের মানসিকতা কেমন। তবে এটা আর বরদাস্ত করা যাবে না।’’ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবরই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের প্রতি আন্তরিক এবং সংবেদনশীল।

Advertisement

রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি জাতীয় তফসিলি জনজাতি কমিশনের চেয়ারপার্সনকেও চিঠি লিখেছেন সুকান্ত। তপনের ঘটনায় অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। চলতি বছরেই পঞ্চায়েত ভোট রয়েছে। বছর ঘুরলেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দণ্ডিকাণ্ডকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ বানিয়ে আসরে নেমেছে বিজেপি। এর আগে রাজ্যের একাধিক ঘটনা নিয়ে দিল্লির দরবারে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। যার মধ্যে রয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা। আবার, এর মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি তিলজলায় শিশু খুনের ঘটনা। আর এ বার দণ্ডিকাণ্ড নিয়ে সুর চড়া করল বিজেপি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তপন বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক বুধরাই টুডুর উপস্থিতিতে বিজেপির জেলা মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে গোফানগর অঞ্চলের প্রায় ২০০ জন মহিলা তাঁদের পরিবার-সহ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন শনকইর গ্রামের বাসিন্দা মার্টিনা কিস্কু, শিউলি মারডি, ঠাকরান সোরেন এবং মালতী মূর্মূ। দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল মহিলা মোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় তাঁদের। অভিযোগ উঠেছে, বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কাটিয়ে আবার তৃণমূলে যোগদান করানো হয় তাঁদের। প্রদীপ্তা বলেছিলেন, ‘‘ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে তাঁরা নিজেরাই বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কেটে এসে আবার তৃণমূলে যোগদান করেন।’’

এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে ইতিমধ্যেই মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে সরানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে স্নেহলতা হেমব্রমকে। ঘটনাচক্রে তিনিও তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement