Mamata Banerjee

ইন্দ্রনীলের ট্রাউজার্সে দাগ কেটে রেখে দিতেন অরূপ! রাজ্যের দুই মন্ত্রীর গোপন কাহিনি শোনালেন মমতা

নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনার ফাঁকেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং অরূপ বিশ্বাসকে নিয়ে মজার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রনীল ‘কিপটে’ এবং ‘খুব হিসেবি’ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ১৮:৩৮
Share:

ইন্দ্রনীল সেন এবং অরূপ বিশ্বাসকে নিয়ে রসিকতা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

প্রশাসনিক বৈঠকে গম্ভীর আলোচনার মধ্যেই মজার কাহিনি শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের তথ্যসংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের খুনসুটি ফাঁস করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রনীল-অরূপের অকথিত কাহিনির দৌলতে এক লহমায় প্রশাসনিক বৈঠকের গুরুগম্ভীর পরিবেশ বদলে গেল ঘরোয়া বৈঠকে। হেসে কুটিপাটি সকলে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকের মধ্যেই পোশাক নিয়ে ইন্দ্রনীল এবং অরূপের মজার কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ‘বাংলার শাড়ি’র দোকান খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক বৈঠকে সেই ভাবনার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। জানান, রাজ্যের ব্লকে ব্লকে চালু করা হবে ‘বাংলার শাড়ি’র দোকান। যেখানে শুধুমাত্র বাংলার শাড়ি পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পাওয়া যাবে পুরুষদের পোশাকও। ওই দোকানে পুরুষদের জন্য কী পোশাক রাখা হবে, তা নিয়ে একটি কমিটি তৈরির কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়েন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল। মমতা রসিকতা করে বলেন, ‘‘ইন্দ্রনীল হিসেব খুব ভাল জানে। ওকে তো এই কমিটির চেয়ারম্যান করা উচিত।’’ এর পরেই হাসিমুখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে যখন ও (ইন্দ্রনীল) বাইরে যায়, শুনতে পাই ফোন করে বলে, শোন না, ফ্রিজ থেকে বার কর চারটে ট্যাংরা, তিনটে পার্শে, দু’পিস কাটা পোনা। এই টাইপের হিসেব করে ও। মেয়েরাও এত মনে রাখবে না। কিপটে তো কিপটেই। একটা পিস কাউকে বেশি দেবে না।’’

ইন্দ্রনীল সম্পর্কে যখন মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলছেন, তখন বৈঠকে উপস্থিত সকলের মুখেই হাসি। হাসি চেপে রাখতে পারেননি ইন্দ্রনীলও। এর পরে তাঁর পোশাক নিয়েও রসিকতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ইন্দ্রনীলের উদ্দেশে বলেন, ‘‘জামাকাপড় ভাল বোঝো। কিন্তু তুমি ভাল জামাকাপড় পরো না।’’ বলতে বলতেই মমতা বলেন, ‘‘কমিটিতে অরূপকে (বিশ্বাস) রাখো। পিছনে লাগার একটা লোক তো দরকার।’’ বলে হেসে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাকিদের মুখেও তখন হাসি।

Advertisement

অতঃপর ইন্দ্রনীল-অরূপের ‘গোপন কাহিনি’ ফাঁস করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘একটা সিক্রেট গল্প বলে দিই। ইন্দ্রনীল-অরূপ যখন উত্তরবঙ্গে যেত আমার সঙ্গে, তখন ইন্দ্রনীল একটা জামা পরে তিন দিন কাটাত। অরূপ ওকে (ইন্দ্রনীল) জিজ্ঞেস করত, ‘কী রে, প্যান্টটা চেঞ্জ করেছিস?’ ইন্দ্রনীল ‘হ্যাঁ’ বলত। কিন্তু ইন্দ্রনীল জানত না, অরূপ ওর প্যান্টে আগে থেকে দাগ দিয়ে রেখেছে। তার পর সেই দাগ দেখিয়ে অরূপ বলত, ‘কী রে! এটাই তো কাল পরেছিলি।’’ সকলে হাসতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কখনও কখনও মজাটাও দরকার।’’

বৈঠকে অবশ্য ছিলেন না অরূপ। ইন্দ্রনীল-অরূপের কাহিনি বলার আগে বৈঠকের ফাঁকে বিদ্যুৎমন্ত্রীর খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপকে ডাকোনি?’’ অরূপ আসেননি শুনে মমতা বলেন, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছে।’’

প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা জানান, রাজ্যের ব্লকে ব্লকে ‘বাংলার শাড়ি’র দোকান খোলা হবে। তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র বাংলার শাড়ি পাওয়া যাবে। তবে তার দাম হবে সাধ্যের মধ্যে। বিশ্ববাংলায় জিনিসের দাম বেশি। তন্তুজ, মঞ্জুশ্রীতেও দাম বেশি। বাংলার শাড়ির দোকানে নাগালের মধ্যে জিনিস মিলবে। দাম শুরু হবে ৩০০ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ দাম হবে ১০ হাজার টাকা।’’ শাড়ির দাম ৩০০ টাকা উল্লেখ করার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘৩০০ টাকায় অনেক ভাল জামাকাপড় পাওয়া যায়। আমি কিনি কিন্তু। বোকা বানালে চলবে না।’’ তার পরেই ওই দোকানে কোন কোন শাড়ি রাখা হবে, তা ঠিক করতে কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটিতে রাখা হয়েছে তিন মহিলা মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বিরবাহা হাঁসদাকে। শশীর নাম নিতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘শশী খুব ভাল শাড়ি পরে।’’ শাড়ির দায়িত্ব ভাগ করার পরই পুরুষদের পোশাক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইন্দ্রনীল-আখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শুরু হয়েছিল গম্ভীর আলোচনা দিয়ে। শেষ হল মুখ্যমন্ত্রীর রসিকতা দিয়ে। হাসতে হাসতেই ফুরফুরে মেজাজে নবান্ন সভাঘর ছাড়লেন সকলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement