মমতা সম্পর্কে বক্তব্যেও অনড় শুভাপ্রসন্ন। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের তরফে থামাতে চাওয়া হলেও থামতে চাইছেন না দলের ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা রাজ্য সরকারের বিরোধিতা শুরু করেছিলেন তিনি। যে বিতর্কের সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। বুধবার প্রথমে ফোনে ‘ধমক’ এবং রাতে শুভাকে প্রসন্ন করতে শিল্পীর বাড়িতে যান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তখন কিছুটা নরম মনোভাব দেখালেও বৃহস্পতিবার আবার ‘ফোঁস’ করেছেন শুভাপ্রসন্ন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি আবার জানিয়েছেন, ছবিটি না দেখে নিষিদ্ধ করা বেঠিক বলে যে অভিমত তিনি প্রকাশ করেছিলেন, তাতে তিনি অনড়। শুধু তা-ই নয়, বৃহস্পতিবার শুভাপ্রসন্ন বলেছেন, ‘‘আমি আমার অবস্থান থেকে সরে আসব কেন? আমি হিপোক্রিট নই আর আমি হাতে চুড়ি পরি না!’’
গত সোমবার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রদর্শন রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ হতে পারে আশঙ্কা করে ছবিটিকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভাপ্রসন্ন সরাসরি ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা আনন্দবাজার অনলাইনকে শিল্পী বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও শিল্পপ্রচেষ্টার বিরোধিতা পছন্দ করি না। এ ক্ষেত্রে আমি সমর্থন করতে পারছি না। এর ফলে ছবিটা বেশি প্রচার পেয়ে গেল! ভাল বা মন্দ বিচার করার দায়িত্ব মানুষের উপরেই ছাড়া উচিত। সেন্সর বোর্ড যখন ছাড় দিয়েছে, তখন প্রদর্শনে বাধা কোথায়? এই সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না জানি না। তবে থাকলেও কোনও সুবিধা মিলবে না বলেই আমার ধারণা।’’
মঙ্গলবার তৃণমূলের পক্ষে কোনও পাল্টা মন্তব্য করা হয়নি। তবে বুধবার কুণালের সঙ্গে শুভাপ্রসন্নের ফোনে কথা হয়। কুণাল প্রবীণ শিল্পীকে ওই ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এর পরে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে শিল্পী বলেন, ‘‘কুণাল আমায় ভাল ভাবেই এ নিয়ে আর কিছু বলতে বারণ করেছে। তাই আমি আর মুখ খুলতে চাই না।’’ রাতে শুভাপ্রসন্নের বাড়িতেও যান কুণাল। সেখান খাওয়াদাওয়াও হয়। সেখানেও নাকি শুভাপ্রসন্ন চুপ থাকবেন বলে কথা দেন। কিন্তু রাত না পোহাতেই দেখা গেল, শুভাপ্রসন্ন আগের মতোই অপ্রসন্ন। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তরে বিরোধিতার স্বর বজায় রেখেই শিল্পী বলেন, ‘‘আমি তো এখনও বলছি যে (ছবি নিষিদ্ধ করা) অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। একটা ছবি না দেখে ছবিটা নিষিদ্ধ করে দিল! আমার সঙ্গে অনেকেই রয়েছেন।’’ কুণালের বার্তা পাওয়ার পরেও তিনি এমন কথা কেন বলছেন? জবাবে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘একটা প্রতিবাদ তো করব! আমার তো কোনও লক্ষ্মণরেখা নেই। আমি তো দলের সদস্য নই।’’
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা সম্পর্কেও কিছু মন্তব্য করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। এবিপি আনন্দকে তিনি বলেছিলেন, “মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। তবে মমতাকে দিয়ে নয়। কিন্তু সেই সময় কোনও বিকল্প না থাকায় আমরা মমতাকে নিয়ে এসেছি।’’ সেই বক্তব্যের পরেই কুণাল যান শুভাপ্রসন্নের বাড়িতে। সেখানে ‘সমঝোতাচুক্তি’ হলেও তা যে কাজে দেয়নি, তা প্রমাণ করে শিল্পী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সত্য কথাই তো বলে দিয়েছি। তিনি ব্যবসায়ী এবং এলিট সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। আমাদের জন্যই সেটা হয়েছে। মমতা জনপ্রিয় ছিলেন মাটির কাছাকাছি মানুষের কাছে। বিশেষ করে গ্রামবাসীদের মধ্যে।’’ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে কয়েক জন মমতা সম্পর্কে কটাক্ষ করতে থাকলে তিনিই তাঁদের থামিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন শুভাপ্রসন্ন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ তো সব ভুলে যায়। কিন্তু আমরা ভুলি না। আমাদের সব মনে রয়েছে।’’ কিন্তু তা হলে মমতা জননেত্রী হয়ে উঠলেন কী ভাবে? শুভাপ্রসন্নের জবাব, ‘‘সেটা তাঁর প্রজ্ঞায়। তিনি অসাধারণ সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী। এই দু’টো থাকলে মানুষ যা নয়, তার থেকে বেশি এগিয়ে যেতে পারে।’’
শুভাপ্রসন্ন তাঁর অবস্থানে অনড় থাকায় এ প্রশ্নও উঠছে— কুণালের দৌত্য কাজে দিল না? স্বয়ং কুণালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ কথা হয়েছে। উনি বয়স্ক মানুষ। আশা করি উনি কথা রাখবেন। উনি যদি কথা ভঙ্গ করেন তবে আমারও সৌজন্যের কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। উনি আবার কী বলেছেন সেটা ওঁর সঙ্গে কথা বলেই জানব। তার পরে মন্তব্য।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই বাংলা ভাষায় ‘পানি’, ‘দাওয়াত’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে মমতার সঙ্গে সংঘাতের পথে হেঁটেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। সে বারেও কুণালের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল শুভাপ্রসন্নের। তাতে ‘সৌজন্য’ ছিল না বলেই জানা যায়। এখন প্রথমে ফোনে এবং পরে বাড়িতে গিয়েও শুভাপ্রসন্নকে কুণাল নীরব থাকতে বলার পর এবং শিল্পী তার পরেও অবস্থান না-বদলানোয় এই জল কি আরও গড়াতে চলেছে? জানতে প্রায় একই রকম আগ্রহী তৃণমূলের অন্দরমহল এবং রাজ্যের শাসক-ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টেরা।