হাওড়ার পাঁচলার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
তিনি এখন যা বলছেন, সেই বক্তব্য আসলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের মতো মনীষীদের। তাঁদের থেকে শিক্ষা নিয়েই সেই বার্তা তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন তরুণদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার হাওড়ার পাঁচলার সভায় নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলতে গিয়ে এমনটাই জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কয়েক বছরে মমতার সঙ্গে মা সারদা, সচিন তেন্ডুলকর বা প্রয়াত গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের মতো খ্যাতনামীদের তুলনা টেনেছেন তৃণমূলের একাধিক জনপ্রতিনিধি। তা নিয়ে কখনও-সখনও তৈরি হয়েছে বিতর্কও। আবার সেই বক্তব্যের পক্ষেও উঠে এসেছে একাধিক যুক্তি। বৃহস্পতিবার হাওড়ার পাঁচলার সভা থেকে মমতার মুখে শোনা গেল ভিন্ন বার্তা। ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ-তরুণীদের কাছে তিনি তুলে ধরেন তাঁর জীবনের উদ্দেশ্যের কথা। মমতা বলেন, ‘‘আমি যত দিন বাঁচব, মানুষের জন্য বাঁচব। মানুষের জন্য করব। এ জন্যই আমি পরবর্তী তিনটি প্রজন্ম তৈরি করছি। ছাত্র-যৌবন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে। আপনারাই ভবিষ্যৎ। আমি যে কথাগুলি বলছি, এক দিন সুভাষচন্দ্র বসু বলে গিয়েছেন। আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। বিবেকানন্দ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। নজরুল বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। এখন আপনারাও শিখছেন নতুন করে।’’ সেই সূত্রেই আগামিদিনে বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের কাঁধেই সঁপেছেন মমতা।
বস্তুত, মমতা বৃহস্পতিবারের সভাতেও তুলে ধরেন ‘তরুণের স্বপ্ন’-এর কথা। বলেছেন তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ভবিষ্যতের কথা। সেই প্রসঙ্গে তিনি টেনে এনেছেন তরুণদের প্রতি রাজ্য সরকারের দায়দায়িত্বের কথাও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চিরকাল বাঁচব না। এখন যারা ছোট, এখন যারা ছাত্রছাত্রী, এখন যারা যুবক, তারা এক দিন বড় হবে। বাবা-মাকে দেখবে। পরিবারকে দেখবে। শিক্ষকদের দেখবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। কন্যাশ্রীর মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অনেক বড় হতে হবে। বিশ্ব জয় করতে হবে।’’ মমতা বলেন, ‘‘আমি চাই তোমরা বিশ্ব জয় করো। পড়াশোনা তোমাদের কাছে বাধা হবে না। তোমাদের জন্য যা করার দরকার করব।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে নানা সময়ে নানা তুলনা উঠে এসেছে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের কণ্ঠে। মা সারদা আবার জন্ম নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূলের নেতা নির্মল মাজি। সেই মন্তব্যের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন সেটির সত্যতা যাচাই করেনি। তবে সেই বক্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্কও। এর পর মমতার মধ্যে ‘ঐশ্বরিক ক্ষমতা’ আছে বলে মন্তব্য করেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। মানস ভুইয়াঁ আবার মমতাকে তুলনা করেন ‘মা দুর্গার’ সঙ্গে। সেই তালিকায় নাম তুলেছিলেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও। মমতাকে ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর এবং প্রয়াত গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। আবার জানুয়ারি মাসের শেষ পাদে মমতাকে ‘ভারতরত্ন’ দিয়ে সম্মানিত করার দাবি তোলেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস।