Justice Abhijit Gangopadhyay

স্কুল পরিদর্শককে হাই কোর্টে বিচারপতির তলব, মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে পৌঁছলেন দৌড়তে দৌড়তে

পরিদর্শকের আইনজীবী জানিয়েছেন, এখনই আদালতে আসতে তাঁর একটু সমস্যা রয়েছে। কারণ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে রয়েছেন। যদিও তা মানতে রাজি হননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৭
Share:

বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, আধ ঘণ্টার মধ্যে হাওড়া জেলার স্কুল পরিদর্শককে হাজির হতে হবে। — ফাইল ছবি।

আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তথ্য দিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে সাহায্য করেননি হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক (এসআই)। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, আধ ঘণ্টার মধ্যে ওই পরিদর্শককে আদালতে হাজির হতে হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির হতে পারেননি ওই স্কুল পরিদর্শক। হাই কোর্টে তাঁর আইনজীবী উপস্থিত হয়ে জানিয়েছিলেন, এখনই তাঁর মক্কেলের আদালতে আসার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে। কারণ, হাওড়ার স্কুল পরিদর্শক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে রয়েছেন। যদিও তা মানতে রাজি হননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ধমক খেয়ে শেষ পর্যন্ত দেরিতে হলেও হাই কোর্টে পৌঁছন পরিদর্শক। জানান, পাঁচলায় মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক থেকে সরাসরি আসছেন। তবে দফতরে যেতে পারেননি বলে এখনই কিছু তথ্য দিতে পারবেন না। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ফের এই মামলার শুনানি। বিষয়টিতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, ওই দিন কমিশনকে তা সংক্ষেপে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে আদালতকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই স্কুল পরিদর্শককে আধ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘বিকেল ৩টে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শককে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। নয়তো পুলিশকে বলব তাঁকে গ্রেফতার করতে।’’ এর পরেই আদালতে ওই পরিদর্শকের আইনজীবী বলেন, ‘‘তিনি একটি বৈঠকে রয়েছেন। তা ছাড়া এ বিষয়ে তিনি আগেই রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন।’’ যদিও তাঁর দাবি অস্বীকার করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী।

এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আছেন না কি?’’ ওই আইনজীবী জবাবে বলেন, ‘‘না। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে। সম্ভবত হাওড়ার পাঁচলাতে ওই বৈঠক হচ্ছে।’’ এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার স্কুল পরিদর্শক কেন মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে রয়েছেন? তাঁর সেখানে কী কাজ?’’ আইনজীবী বলেন, ‘‘সেটা জানা নেই। তা হলে বলছি আসতে।’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হ্যাঁ। সেটাই করুন।’’ বিচারপতির নির্দেশের পর ছুটে আসেন পরিদর্শক। তিনি আদালতে বলেন, ‘‘পাঁচলা থেকে সরাসরি আসছি। অফিসে যেতে পারিনি। যিনি এই কাজ করেন, তাঁর কাছ থেকে জেনে বলতে পারব কী হয়েছে।’’

Advertisement

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই নিয়ে আর এক প্রস্থ ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘সব জেলা পাঠিয়ে দিয়েছে। আপনি কেন পাঠাননি? যত দ্রুত সম্ভব পাঠিয়ে দিন। শুক্রবার দুপুরে ফের ১২টায় মামলাটি রয়েছে। তার আগে পাঠিয়ে দেবেন। আর যদি আগে পাঠিয়ে থাকেন, আবার ফের পাঠিয়ে দেবেন।’’ স্কুল পরিদর্শকের হয়ে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘সারা রাত জেগে হলেও আমি রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতে বলেছি। ১৮৯ জনের তথ্য পাঠাতে হবে।’’

গত ১৩ জানুয়ারি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, স্কুলের গ্রুপ-ডি নিয়োগ পরীক্ষায় কত জন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছিল, কত জন প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা এবং বাবার নাম-সহ তথ্য রিপোর্ট আকারে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সেই রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্ট জমা করে জানায়, যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, তখন বীরভূম এবং হাওড়া জেলার সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে বীরভূমের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলেও হাওড়া এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য দেয়নি।

ওই দুই জেলায় মোট সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল ৪,৫৫০ জন প্রার্থীকে। তাঁদের সবাইকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে তার মধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ৩, ৮৪৮ জন। এই বিষয়টি জানার পরেই হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শককে দ্রুত তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement