অভিনেতা অল্লু অর্জুনের হায়দরাবাদের বাড়িতে ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
তেলুগু অভিনেতা অল্লু অর্জুনের বাড়িতে হামলার নিন্দা করলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি। রবিবার একদল মানুষ হায়দরাবাদের জুবিলি হিল্সে অভিনেতার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। বাইরে থেকে তাঁর বাড়িতে টম্যাটো ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির ভিতরেও তাঁরা ঢোকার চেষ্টা করেন। অভিনেতার বাড়ির সামনে সাজিয়ে রাখা বেশ কিছু ফুলগাছের টবও ভাঙচুর করা হয়। এই হামলার নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য পুলিশকে।
হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে গত ৪ ডিসেম্বর ‘পুষ্পা ২’-এর প্রিমিয়ারে দুর্ঘটনা ঘটে। ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। তাঁর চার বছরের সন্তান এখনও কোমায়। এই ঘটনার প্রতিবাদেই রবিবার অল্লুর বাড়িতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভকারীরা ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন। অভিযোগ, তাঁরা অভিনেতার বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন এবং তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মৃত মহিলার পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তাঁরা। এর পর দরজার বাইরে থেকেই অল্লুর বাড়ির দিকে ছোড়া হতে থাকে একের পর এক টম্যাটো। বাড়ির সামনে থেকে ফুলের টবগুলি তুলে মাটিতে আছাড় মেরে তা ভাঙা হয়। ঘটনার সময়ে অল্লু বাড়িতে ছিলেন না বলেই খবর।
এই ঘটনার পর রাতেই মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। লেখেন, ‘‘আমি অভিনেতাদের বাড়িতে হামলার ঘটনার বিরোধিতা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং শহরের পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনও ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না।’’
রবিবার অভিনেতার বাড়িতে হামলার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আট জন সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। হামলার একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে দেখা গিয়েছে একাধিক ফুলের টব আছাড় মেরে ভাঙছেন বিক্ষোভকারীরা। নীচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মাটি (ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
অল্লুর বাড়িতে হামলার পর মুখ্যমন্ত্রী রেবন্তের প্রতিক্রিয়া তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সন্ধ্যা থিয়েটারে পদপিষ্টের ঘটনায় প্রথম থেকে অল্লুর বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন রেবন্ত। বিধানসভায় তিনি জানান, পুলিশি অনুমতি ছাড়াই ‘পুষ্পা ২’-এর প্রিমিয়ারে চলে গিয়েছিলেন অল্লু। শুধু তা-ই নয়, পদপিষ্টের ঘটনার পর তিনি থিয়েটারও ছাড়তে চাইছিলেন না। পুলিশকেই বাধ্য হয়ে তাঁকে থিয়েটার থেকে বার করে আনতে হয়। পরে ঘটনার দিন থিয়েটার চত্বরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। সেখানেও দেখা যায়, অল্লুকে ‘এসকর্ট’ করে থিয়েটার থেকে বার করে আনছেন পুলিশকর্মীরা। তেলঙ্গানা পুলিশের ডিজি জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘অল্লু অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনও রাগ নেই আমাদের। কিন্তু সিনেমার প্রচারের থেকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা অনেক বেশি জরুরি। ওঁরা সিনেমায় নায়ক হতে পারেন। কিন্তু সমাজের সমস্যাও ওঁদের বুঝতে হবে।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে শনিবার মুখ খুলেছিলেন অল্লু। বলেছিলেন, ‘‘বহু ভুল খবর চারদিকে ছড়াচ্ছে। কোনও বিভাগ বা রাজনীতিক— আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। কিন্তু এটা অপমানজনক। মনে হচ্ছে যেন চরিত্রহনন করা হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী রেবন্তকেও জবাব দিয়েছিলেন তিনি।
৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় অল্লুকে গ্রেফতার করেছিল হায়দরাবাদ পুলিশ। পরে তেলঙ্গানা হাই কোর্ট থেকে তিনি চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন। তবে জেলে এক রাত কাটাতে হয়েছিল অভিনেতাকে।