Narendra Modi

Modi-Mamata: চার দিনের দিল্লি সফরে মোদীর মুখোমুখি তিন বার, বিরোধী শিবির নেই দিদির সাক্ষাৎ-তালিকায়

এ বার দিল্লিতে অন্য মমতাকে দেখা যাচ্ছে বলে অভিমত বিরোধী শিবিরের। মোদীর সঙ্গে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। বিরোধী শিবিরের থেকে দূরত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২২ ১৭:১৬
Share:

বিরোধী শিবিরের থেকে দূরত্ব রাখলেন মমতা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মাঝে সময় দু’মাসেরও কম। কিন্তু ছবি একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো!

Advertisement

আপাতত দিল্লি সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে রাজধানীতে গিয়েছিলেন ১৪ জুন। দিল্লিতে পা রেখেই চলে গিয়েছিলেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের কাছে। পর দিন মমতার ডাকে ১৭টি দল এক হয়ে বৈঠকে বসেছিল দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে। সর্বসম্মত ভাবে রাষ্ট্রপতি ভোটের প্রার্থী ঠিক করতে। বস্তুত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বকলমে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকাতে। শারীরিক কারণে সনিয়া গাঁধী আসতে না পারলেও কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা ছিলেন সেই আলোচনায়।

তার পরে রাষ্ট্রপতি ভোটের নদী দিয়ে জল অনেকটাই গড়িয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের প্রার্থীকে হারিয়ে জিতেছেন এনডিএর প্রার্থী। এ বার দিল্লি সফরে চারদিন রাজধানীতে থাকছেন মমতা। কিন্তু বিরোধী শিবিরের কারও সঙ্গেই তাঁর সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা নেই। অন্তত শনিবার পর্যন্ত। কিন্তু ঘটনাচক্রে, এই চার দিনে মমতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ হচ্ছে তিন-তিন বার! একবার একান্তে। যা শুক্রবার হয়ে গিয়েছে। মোদীর বাসভবনে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক করেছেন মমতা। সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করেননি (বস্তুত, এই দিল্লি সফরে শনিবার পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক কথাবার্তায় যাননি মমতা)। তবে দলের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া অর্থ দেওয়ার দাবি সংবলিত চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বিরোধীরা বলছেন, এমন বৈঠকে তো সরকারি অফিসারদের থাকাই দস্তুর। কেন ‘একান্তে’ এমন বৈঠক হবে!

Advertisement

মোদীর সঙ্গে মমতা মুখোমুখি হচ্ছেন দু’টি সরকারি অনুষ্ঠানে। প্রথমটি শনিবার। ‘আজাদি কা অম্রুত মহোৎসব’ কর্মসূচিতে। সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত থাকছেন মমতা। আর দ্বিতীয় সরকারি কর্মসূচি হল নীতি আয়োগের বৈঠক। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই উপস্থিত থাকবেন মমতা।

এর মধ্যেই ঘটেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি পার্থকে গ্রেফতার করেছে। পার্থ রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার পাশাপাশিই তৃণমূলেরও মহাসচিব পদে ছিলেন। ফলে সঙ্কটে পড়েছে তৃণমূলও। অন্যদিকে, বিরোধীরা পার্থ-কাণ্ডে তৃণমূলকে বেঁধার পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছেন। কয়লা পাচার, বালি পাচার ইত্যাদি কাণ্ডে বিরোধীরা অভিষেককে কাঠগড়ায় তুলেছেন। যদিও অভিষেক তথা তৃণমূলের তরফে সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিষেক প্রকাশ্যে একাধিক বার বলেছেন, তিনি টাকা নিয়েছেন প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে জীবনদান করবেন!

শুক্রবার মোদী সকাশে মমতা। ছবি: টুইটার।

কিন্তু পার্থ-কাণ্ডে ইডির তদন্ত চলাকালীন মমতার মোদীর সঙ্গে ‘একান্ত সাক্ষাৎ’ বিরো‌ধীদের আরও রাজনৈতিক আক্রমণের অবকাশ তৈরি করে দিয়েছে। তৃণমূল উড়িয়ে দিলেও তাঁরা তুলছেন ‘সেটিং’-এর তত্ত্ব। অর্থাৎ, মোদীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করে মমতা দু’পক্ষের মধ্যে যে রাজনৈতিক শত্রুতা এবং দূরত্ব ছিল, তাতে প্রলেপ দিতে চাইছেন। যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ওই অভিযোগ সটান উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি বলছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লি পৌঁছে দলের সাংসদদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করেছেন। আর আগের দিল্লি সফরে যাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী ঠিক করতে বিরোধীদের এককাট্টা করতে চেয়েছিলেন, সেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে। তবে এটাও ঠিক যে, বিরোধী শিবিরের প্রার্থী ঠিক করার সময় মমতা দ্রৌপদীর কথা জানতেন না। তেমন হলে যে তাঁরা দ্রৌপদীকে সমর্থনের কথা ভাবতেন, তা পরে বলেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘আগে থেকে যদি বিজেপি জানাত, তারা একজন আদিবাসী মহিলাকে প্রার্থী করছে, তা হলে আমরাও চেষ্টা করতাম। বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ১৭টা দল মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতেই পারত।’’ কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

অতীতের অ্যালবাম থেকে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে নেওয়া।

ঘটনাচক্রে, উপরাষ্ট্রপতি ভোটে কিন্তু ভোটদানে বিরত থেকেছে মমতার তৃণমূল। শনিবারেই ওই ভোট হয়েছে। এনডিএ প্রার্থী পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে ছিলেন মার্গারেট আলভা। মার্গারেটের দাবি, তিনি একাধিক বার মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মমতা সাড়া দেননি। যদিও মমতার তরফে তার সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। অন্য দিকে, বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পক্ষান্তরে বিজেপি তথা ধনখড়কেই সুবিধা করে দিয়েছে তৃণমূল।

মোদীর সঙ্গে মমতা দেখা করতে গিয়েছিলেন হলদে রঙের গোলাপের তোড়া নিয়ে। সাধারণ ভাবে বলা হয়, হলদে গোলাপ ‘বন্ধুত্বের প্রতীক’। তবে এ-ও ঠিক যে, মমতা এর আগেও মোদীর সঙ্গে যখনই দেখা করেছেন, হলদে গোলাপ নিয়েই গিয়েছেন। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, এ বার মোদীর জন্য কোন উত্তরীয় নিয়ে যাবেন, ব্যক্তিগত ভাবে সেই ভাবনাতেও সময় ব্যয় করেছেন মমতা। দিল্লির বাঙালি মহল্লা চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে মোদীর জন্য কেনা হয়েছে সন্দেশ এবং দই।

বিরোধী শিবিরের কোনও নেতা বা নেত্রীর সঙ্গেই মমতা এই দিল্লি সফরে দেখা করেননি। তেমন কোনও কর্মসূচিও তাঁর নেই বলেই এখনও পর্যন্ত দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে আটক করা নিয়ে উত্তাল ছিল দিল্লি। কিন্তু সেই শহরে থেকেও মমতা সেই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিরোধী শিবিরের নৈশভোজেও যাননি মমতা। বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী আলভার সম্মানে সংসদের লাইব্রেরি ভবনে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। সেখানে সনিয়া গাঁধী, রাহুল, পওয়ার, টি আর বালু-সহ সব দলের সংসদীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। ১৫টিরও বেশি বিরোধী দলের ওই মঞ্চে ছিল না শুধু তৃণমূল। বিরোধীদের আহূত নৈশভোজের আসরের কাছেই সাউথ অ্যাভিনিউয়ে ছিলেন মমতা-সহ তৃণমূল সাংসদরা।

বিরোধীদের বক্তব্য, ধারাবাহিক ভাবে বিরোধী জোটের সঙ্গে তৈরি হওয়া ‘দূরত্ব’ বেশি করে প্রকট হচ্ছে মমতার এই দিল্লি সফরে। যা দেখে গেরুয়া শিবির বলছে, ‘‘এত দিনে উনি বুঝতে পেরেছেন, জাতীয় রাজনীতিতে ওঁর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’’ আবার কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষক-নিয়োগ কাণ্ডে পার্থের গ্রেফতার, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বিপুল নগদ টাকা উদ্ধারের পরে বিরোধী শিবিরের অন্যান্য দলের সামনে একটু ‘অস্বস্তি’-তে থাকতে হতে পারে মমতাকে। যদিও রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, তাঁরা সংসদের ভিতরে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করেই চলবেন। এর ফলে বিরোধী ঐক্যে কোনও চিড় ধরবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement