চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়ে নানা প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা আরও জোরদার করতে এ বার চিকিৎসকদের জন্য তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যেমন ডিপ্লোমা কোর্স হয়, ডাক্তারিতেও সেই রকম ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা যায় কি না দেখা হোক।’’ পাশাপাশি সিনিয়র নার্সদের পদোন্নতি দিয়ে ‘সেমি’ ডাক্তার তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিয়ে চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর রয়েছে মমতার হাতে। প্রায়শই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন রোগীরা। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসক না থাকা নিয়েও অনেকে অভিযোগ করেন। এই আবহে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে বৃহস্পতিবার মেডিক্যালে ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘লোকসংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতাল বাড়ছে। ডাক্তারদের একটা ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে পারি কি না দেখব, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো।’’ সাধারণত ডাক্তারি পড়ার কোর্সের মেয়াদ ৫ বছরের। সেখানে ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের পর চিকিৎসক তৈরি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলে। ডিপ্লোমা কোর্স প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘ওদের দিয়ে যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করানো যায় দেখতে হবে।’’
চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সদের নিয়ে নানা ভাবনার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিনিয়র নার্সদের পদোন্নতি দিয়ে ‘সেমি’ ডাক্তার করার কথাও বলেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘নার্সদের সংখ্যা কম থাকার জেরে সমস্যা হচ্ছে। নার্সিং কলেজ তৈরি করা হোক আরও। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণই যথেষ্ট।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে সব নার্স সিনিয়র, যাঁদের অবসর নিতে ৫-১০ বছর বাকি রয়েছে, তাঁদের পদোন্নতি দিয়ে যদি সেমি ডাক্তার করা যায়। ডাক্তার তো করতে পারব না!’’ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানান যে, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন দিয়ে যান, নার্সরাই সবটা করেন।
নার্সদের প্রশিক্ষণের দিকে জোর দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘নার্সরা তো আর অস্ত্রোপচার করবেন না! সিনিয়র নার্সরা তো রয়েছেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ দেবেন। স্যালাইন এবং ইঞ্জেকশন দেওয়া এই দুটো জিনিস ভাল করে শেখাবেন।’’ এ কথা বলতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন মমতা। বলেন, ‘‘আমার হাতেই কত বার ফুটো করে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। স্যালাইন দিতে হলেই ভয় লাগত।’’
চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার পরই স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে এই নিয়ে কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই কমিটিতে নার্স, সিনিয়র ডাক্তার, জুনিয়র ডাক্তারদের রাখতে বলেন। মমতা বলেন, ‘‘ওঁদের বলো, এই প্রস্তাব এসেছে। মতামত জানো। এতে অনেক কর্মসংস্থান হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে ন্যূনতম পরিষেবা পায় না। এ বার কি মুখ্যমন্ত্রী নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কায়দায় ডাক্তার, নার্স তৈরি করে রাজ্যে গরিব মানুষের জীবন বিপন্ন করে দেবেন? যাঁদের মাথায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এই ধরনের ভাবনা আসে, তাঁদের মানসিক চিকিৎসার দাবি করছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম। এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে কাজে লাগানোর নাম করে মুখ্যমন্ত্রী যে ডিপ্লোমা ডাক্তার তৈরির পরিকল্পনা করেছেন, তা চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক। জনস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি পদক্ষেপ। যা কার্যত ভোটের চমক ছাড়া কিছু নয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’