অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের জন্য বিচারককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠতেই হইচই আইন মহলে। বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের আইনজীবীরা তো বটেই, তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরাও বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। এক জোট হয়ে এ ব্যাপারে বিচারকের পাশে দাঁড়িয়েই তাঁরা হুমকি ‘চিঠি’ দেওয়ার ঘটনার সমালোচনা করেছেন।
আসানসোলের সিবিআই আদালতে বুধবার অনুব্রতকে হাজির করানোর কথা। তার আগেই ওই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে হুমকি চিঠি দেওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের জামিনের দাবিতে পাঠানো হয়েছে ওই হুমকি চিঠি। অনুব্রতকে জামিন না দিলে বিচারককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেওয়া হয়। যার সমালোচনা করে বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। ওরা বরাবরই এমন করে আসছে। যখনই তৃণমূলের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তখনই ওরা বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। এর আগে মদন মিত্রের জামিনের সময়েও তৃণমূলের আইনজীবীরা আদালতের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনের পিটিশন শুনতেই চাননি বিচারপতি কৌশিক চন্দ। কারণ তার আগে তৃণমূলের আইনজীবীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। ২০১১ সাল থেকেই এই ধারা চলে আসছে। আমাকে তো নিম্ন আদালতের বিচারকরা প্রায়ই হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেন।’’
আর এক বামপন্থী আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অনুব্রত বরাবর হুমকি দিয়েই এসেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে বিচারকও হুমকি পাচ্ছেন। কে বা কারা চিঠি দিয়েছেন জানি না, কিন্তু যে হেতু মাদকের প্রসঙ্গ তুলে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তা হলে বুঝতে হবে যিনি চিঠি লিখেছেন তাঁর কাছে মাদক রয়েছে। আমি চাই নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো এর তদন্ত করুক।’’
তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকারও এই ঘটনায় বিচারকের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে বিচার ব্যবস্থার উপর আক্রমণ করা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। সমাজের ভরসা বিচার ব্যবস্থা। সেই বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় না।’’
আসানসোল আদালতের আইনজীবী ও তিন বারের সভাপতি আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এক জন বিচারককে এই ভাবে হুমকি দেওয়ার ঘটনা অন্যান্য রাজ্যে হয়েছে। এই রাজ্যে এর আগে কোনও দিন হয়নি। হুমকি চিঠির ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে তা চিন্তার বিষয়। ঝাড়খণ্ডে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, অন্যান্য রাজ্যেও হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা ঘটবে, তা ভাবা যায় না। আমি সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’
আসানসোল আদালতের আইনজীবী সংগ্রাম সিংহও ঘটনাটির নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খুব নিন্দনীয় ঘটনা। হয়তো অনুব্রত মণ্ডল এই ঘটনায় জড়িত নন। বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলে যার নাম প্রকাশ্যে এসেছে, তিনিও হয়তো এই চিঠি দেননি। কিন্তু যদি দিয়ে থাকেন, তা হলে তার উচ্চ স্তরের তদন্ত হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধ করব। সিবিআই আদালতের ওই বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত ভাল মানুষ। তাকে যদি হুমকি দেওয়া হয় তা খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে।’’