রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ। — ফাইল চিত্র।
রাত ৯টা। বেলুড় মঠে শেষকৃত্য রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের। সাক্ষী অগণিত ভক্ত। শেষকৃত্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত খোলা মঠের দরজা।
মঙ্গলবার রাত ৮টা ১৪ মিনিটে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন স্বামী স্মরণানন্দ। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। অসুস্থ হয়ে সেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত থেকে স্বামী স্মরণানন্দের দেহ শায়িত ছিল বেলুড় মঠে। ভক্তদের জন্য খোলা ছিল মঠের দরজা। সেখানেই গুরুকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছিলেন বহু মানুষ। আগামী ৭ এপ্রিল বেলুর মঠে স্বামী স্মরণানন্দের স্মৃতিতে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ পুজোর আয়োজনও করা হয়েছে।
গত ২৯ জানুয়ারি মুত্রনালিতে সংক্রমণের কারণে স্বামী স্মরণানন্দকে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর আগে তিনি কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের সাত তলার ৫০ নম্বর কেবিনে ছিলেন তিনি। এর পর সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত হন স্বামী স্মরণানন্দ। শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। ৩ মার্চ আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। গত ১৩ মার্চ ছোট অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম ভাবে শ্বাসকার্যের জন্য একটি নল ঢোকানো হয় তাঁর শ্বাসনালিতে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, কিডনিতেও সমস্যা হয়েছিল তাঁর।
২০২২ সালের মার্চ মাসেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ ছিলেন স্বামী স্মরণানন্দ। সে সময় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। বেশ কয়েক দিন চিকিৎসা চলার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আবার আগের মতোই কাজকর্ম করছিলেন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
১৯২৯-এ তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলার আন্দামি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন স্বামী স্মরণানন্দ। খুব কম বয়সে মাকে হারান। ১৯৪৬ সালে স্কুলের পাঠ শেষ করে নাসিকে বাণিজ্য বিভাগে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৪৯-এ মুম্বই পাড়ি দেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুম্বই রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ১৯৫২ সালে, ২২ বছর বয়সে স্বামী শঙ্করানন্দের কাছে মন্ত্রদীক্ষা নেন। ১৯৫৬ সালে ব্রহ্মচর্য নেন তিনি।
১৯৫৮-তে ‘অদ্বৈত আশ্রম’-এর কলকাতা শাখায় আসেন। দীর্ঘ ১৮ বছর কাজ করেছেন ‘অদ্বৈত আশ্রম’-এর বিভিন্ন শাখায়। বিবেকানন্দ প্রবর্তিত ইংরেজি পত্রিকা ‘প্রবুদ্ধ ভারত’-এর প্রবন্ধক সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন কয়েক বছর। প্রায় ১৫ বছর ‘রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ’-এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩-তে রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য হন। ১৯৯১-এ চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি।