Kunal Ghosh Sudip Banerjee Conflict

‘রোজ়ভ্যালির দালাল সুদীপ, মোদীর সঙ্গে সেটিং করে নিয়েছেন’! আবার আক্রমণ কুণালের, আর কী বললেন?

রোজ়ভ্যালির সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ প্রসঙ্গে শুক্রবারও একটি পোস্ট করেছিলেন কুণাল ঘোষ। সরাসরি সুদীপের নাম না করে জানিয়েছিলেন, লোকসভার এক বিরোধী দলনেতাকে মোদী রোজ়ভ্যালি থেকে বাঁচিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৬
Share:

(বাঁ দিকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আবারও তোপ দাগলেন কুণাল ঘোষ। সুদীপকে ‘রোজ়ভ্যালির দালাল’ বলে মন্তব্য করলেন তিনি। শনিবার আবারও তুললেন বিজেপির সঙ্গে সুদীপের ‘সেটিং’-এর অভিযোগ।

Advertisement

আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডে ‘জনগর্জন সভা’ করবে তৃণমূল। শনিবার তারই প্রস্তুতি মিছিলে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে হাঁটেন কুণাল। মিছিল হয় রাজাবাজার মোড় থেকে শ্রদ্ধানন্দ পার্ক পর্যন্ত। সেই কর্মসূচির শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কুণাল। সুদীপ প্রসঙ্গে গত দু’দিন ধরে তিনি যে সব মন্তব্য করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কুণাল বলেন, ‘‘আগেও বলেছি। এখনও বলছি। সুদীপ রোজ়ভ্যালির দালাল। দালালকে তো দালালই বলব।’’

উল্লেখ্য, রোজ়ভ্যালিকাণ্ডে সুদীপকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বেশ কয়েক মাস তিনি ভুবনেশ্বরের জেলে কাটিয়েছিলেন। ওই প্রসঙ্গ টেনে কুণাল শনিবার বলেন, ‘‘রোজ়ভ্যালি মামলায় সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। আর সুদীপ গিয়েছিলেন মোদীর কাছে। ব্যাপারটা ওখানেই ‘সেটেল্‌ড’। বিজেপি তো তার পোষ্যপুত্রদের বাঁচাবেই। সেটাই স্বাভাবিক।’’ এখানেই থামেননি কুণাল। তিনি আরও বলেন, ‘‘সুদীপ রোজ়ভ্যালির মালিকের ছেলেদের কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়ে সেই টাকা নিয়ে বিদেশ সফর করেছেন।’’

Advertisement

বস্তুত, সুদীপের দুর্নীতি-যোগ নিয়ে শনিবার সকালেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন কুণাল। তাতে কয়লা কেলেঙ্কারির উল্লেখ রয়েছে। কুণাল লিখেছেন, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং তাঁর হয়ে ভুবনেশ্বর অ্যাপোলো হাসপাতালের বিল মেটানোর নথি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি যখন বন্দি ছিলেন, তাঁকে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছিল, নাকি তাঁর হয়ে হাসপাতালের বিল কেউ মিটিয়ে দিয়েছিলেন, তদন্ত করে দেখতে হবে।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে কুণাল লেখেন, ‘‘ যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে কয়লা ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে ওই টাকার যোগ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে সুদীপকে গ্রেফতার করা উচিত। যদি কেন্দ্রীয় সংস্থা এটি এড়িয়ে যায়, আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

শনিবার বিকেলে ওই পোস্ট নিয়ে কুণালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বলেন, ‘‘আমি প্রতিজ্ঞাব্ধ। ওই পোস্ট নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করব না। যা বলে দিয়েছি, তা আছে। আর বাড়তি কোনও কথা বলব না। আমি উপরওয়ালার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’’ পোস্টটি কুণাল তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে ‘পিন’ করে রেখেছেন। অর্থাৎ, তাঁর প্রোফাইলের শুরুতেই ওই পোস্ট দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে বিতর্কের সূত্রপাত। সে দিন কুণাল একটি পোস্ট করেছিলেন। যাতে লেখা ছিল, ‘‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বার বার হতে পারে না।’’ কাকে নিয়ে কুণালের এই পোস্ট, সে বিষয়ে চর্চার মধ্যেই পরের দিন সকালে দেখা যায়, কুণাল এক্সের বায়ো থেকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্রের পরিচয় মুছে দিয়েছেন। বিকেলে জানান, ওই পদগুলি তিনি ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। দলের ‘সৈনিক’ হিসাবে কাজ করবেন।

শুক্রবার আরামবাগে মোদীর সভার প্রসঙ্গ টেনে সুদীপকে আরও এক বার তোপ দেগেছিলেন কুণাল। নাম না-করে রোজ়ভ্যালির প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। তিনি জানান, লোকসভার এক বিরোধী দলনেতাকে রোজ়ভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে মোদী গলায় বকলস পরিয়ে রেখেছেন। এর পর বিকেলে আর রাখঢাক করেননি। একটি সাক্ষাৎকারে সরাসরি সুদীপের নাম করে বলেন, ‘‘সুদীপ ‘বিজেপির লোক’। উত্তর কলকাতায় এ বার পদ্মফুল বনাম পদ্মফুলের লড়াই হবে। তিনি আরও বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় যা হচ্ছে, তা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। একে তো কোনও জেলা দফতর নেই। ক্যালকাটা বয়েজ় স্কুলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ঘর দখল করে অফিস চালাচ্ছেন। ওঁকে নাকি কোন মিশনারিজ় অনুমতি দিয়েছে। কী করে একটি স্কুলে রাজনীতির আখড়া চলতে পারে?’’

কুণাল-সুদীপের এই ডামাডোল লোকসভা নির্বাচনের আগে অস্বস্তিতে রেখেছে তৃণমূলকে। তবে গোটা পর্বে এক বারও সুদীপ নিজে মুখ খোলেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি। যদিও তৃণমূল সূত্রে খবর, সুদীপ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও এ বিষয়ে দলনেত্রীকে অবগত করে রাখছেন। শনিবার ফিরহাদ দলের অন্দরের এই বিতর্ক প্রসঙ্গে জানান, তিনি কিছু বললে ‘বিস্ফোরণ’ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement