Kunal Ghosh

‘সিস্টেমে আমি মিস্‌ফিট’, তৃণমূলের পদ ছেড়ে মুখ খুললেন কুণাল, ছাড়লেন সরকার প্রদত্ত নিরাপত্তা?

কুণাল জানিয়েছেন, ‘সিস্টেমে’ তিনি নিজেকে ‘মিস্‌ফিট’ বলে মনে করছেন। তবে দলের সৈনিক হিসাবে থাকতে চান। দ্বিতীয় পোস্টে দলের এক নেতার বিরুদ্ধে নাম না করে কটাক্ষ করেছেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৬
Share:

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় মুখপাত্রের পদ ছেড়ে দিলেন কুণাল ঘোষ। তবে দলের সঙ্গেই থাকছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে কুণাল জানিয়েছেন, ‘সিস্টেমে’ তিনি নিজেকে ‘মিস্‌ফিট’ বলে মনে করছেন। তবে দলের সৈনিক হিসাবে থাকতে চান। তৃণমূল সূত্রের খবর, কুণাল ঘোষ তাঁর নিরাপত্তাও ছেড়ে দিয়েছেন। নিজেকে দলের মুখপাত্রদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। যদিও একটি সাক্ষাৎকারে কুণাল দাবি করেছেন, তিনি নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছেন এমনটা নয়। শুক্রবার নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকেননি। কারণ, তিনি শহরের মধ্যেই রয়েছেন

Advertisement

এক্সে কুণাল লিখেছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র পদে থাকতে চাইছি না। সিস্টেমে আমি মিস্‌ফিট। আমার পক্ষে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি দলের সৈনিক হিসাবেই থাকব। দয়া করে দলবদলের রটনা বরদাস্ত করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সেনাপতি, তৃণমূল আমার দল।’’

কুণাল আরও একটি পোস্ট করেন কয়েক মিনিটের ব্যবধানে। দলে কার উপর তাঁর ক্ষোভ, ওই পোস্টে তার ইঙ্গিত রয়েছে। আরামবাগে মোদীর সভার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কুণাল লিখেছেন, ‘‘মোদী বাংলার মাটিতে একরাশ কুৎসা করে গেলেন। যুক্তিতে তাঁকে ধুয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ঘটনা হল, তাঁর কড়া সমালোচনার মূল দায়িত্ব যাঁদের, দু’টি আলাদা বিরোধী দলের লোকসভার দলনেতারা তো প্রধানমন্ত্রীরই লোক। এঁদের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ। এই দু’জনকে দু’ভাবে ব্যবহার করেন মোদী। এক জনকে রোজ়ভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে গলায় বকলস পরিয়ে রেখেছেন।’’

Advertisement

পোস্টে কুণাল কারও নাম করেননি। তবে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, কাদের কথা বলতে চেয়েছেন তিনি। দু’টি আলাদা বিরোধী দলের নেতা বলতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধীর চৌধুরীর কথা কুণাল বোঝাতে চেয়েছেন বলে অনেকের মত। সুদীপ লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা। অধীর লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা। বস্তুত, তৃণমূল মুখপাত্র হিসাবে কুণাল দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করেন, অধীরের সঙ্গে মোদী তথা বিজেপির সখ্য রয়েছে। সেই বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই অধীর বহরমপুরে জেতেন। তবে সুদীপ-বিজেপি বোঝাপড়া বোঝাতে গিয়ে রোজ়ভ্যালি প্রসঙ্গ টেনেছেন কুণাল। এই মামলাতেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক মাস ভুবনেশ্বর জেলে কাটাতে হয়েছিল সুদীপকে। কুণাল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার কারণে সেই মামলা নিয়ে সুদীপকে আর ঝক্কি পোহাতে হয় না। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে অংশ সরব, তাঁদের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

জল্পনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। এক্স হ্যান্ডলেই কুণাল রাতে লেখেন, ‘‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বার বার হতে পারে না।’’ ওই পোস্টটিতেও কুণাল কারও নাম করেননি। ফলে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, কাকে ইঙ্গিত করছেন কুণাল?

তৃণমূলের অন্দরে যখন কুণালের এই পোস্ট নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে, তখন শুক্রবার সকালে হঠাৎ দেখা যায়, তিনি এক্স হ্যান্ডলের বায়ো থেকে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজনীতিকের পরিচয়টাই মুছে ফেলেছেন। সেখানে এখন তাঁর পরিচয় শুধুই ‘সাংবাদিক আর সমাজকর্মী’। এর পর সকাল থেকে কুণালের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। অবশেষে শুক্রবার বিকেলে নিজেই জল্পনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন কুণাল। জানালেন, তিনি দলের পদে থাকতে চান না। তবে দলের সঙ্গেই সৈনিক হয়ে থাকবেন।

নাম না করলেও তৃণমূলের অন্দরে অনেকের বক্তব্য ছিল, বৃহস্পতিবার রাতে কুণালের পোস্ট সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। নাম না-করে তিনি সুদীপের প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। কারণ, সুদীপ এবং কুণালের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে অজানা নয়। শুক্রবারের পোস্টে সেই সুদীপের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ আরও স্পষ্ট হল।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, আগামী ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেডের প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কলকাতার নেতাদের একটি বৈঠক ডেকেছিলেন সুদীপ। সেখানে ডাক পাননি কুণাল। তাতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। অনেকের মতে, সেই কারণেই তিনি বৃহস্পতিবার রাতের পোস্টটি করে থাকতে পারেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা কেউই স্বীকার করছেন না। শুক্রবারের পোস্টেও তেমন কোনও ক্ষোভের উল্লেখ তিনি করেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement