ফাইল চিত্র।
নকশায় কোনও ত্রুটি থাকলে কেন কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতর প্রথমেই তা বাতিল করে দিচ্ছে না? কেন সংশ্লিষ্ট নকশা পাঠানো হচ্ছে ‘মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কমিটি’-তে (এমবিসি), তা নিয়ে শুধু নির্মাণ সংস্থা বা বিনিয়োগকারী মহলেই নয়, অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এমবিসি সদস্যদের একাংশের মধ্যেও।
ওই কমিটিতে পুর প্রতিনিধির পাশাপাশি রয়েছেন দমকল, পুলিশ, পরিবেশ, স্থপতি, নগর পরিকল্পক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা। শুধু তাই নয়, পদাধিকার বলে পুরসভার কমিশনার এমবিসি-র চেয়ারম্যান হলেও তিনি অধিকাংশ সময়েই কেন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ফলে বকলমে যা দাঁড়াচ্ছে তা হল, রাজ্য সরকার সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরির (ইজ় অব ডুয়িং বিজ়নেস বা ইওডিবি) উপরে জোর দিলেও তার বাস্তবায়নে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, যে কোনও প্রকল্পের নকশা প্রাথমিক ভাবে জমা পড়ে পুর বিল্ডিং দফতরে। তার মধ্যে জমির মাপ ৫০০ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ১৪.৫ মিটারের ঊর্ধ্বে, এমন নির্দিষ্ট কয়েকটি মাপকাঠির ভিত্তিতে বড় প্রকল্পগুলির নকশা বিল্ডিং দফতর থেকে এমবিসি-তে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের বক্তব্য, প্রাথমিক পর্বে পুর বিল্ডিং দফতর নকশা বাছাই করতে পারে। অর্থাৎ, জমা পড়া নকশার প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে কি না বা সেই নকশায় কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, আগে তা দেখে তার পরে এমবিসি-তে পাঠানো হলে সময় বাঁচে।
কারণ, এ ক্ষেত্রে বিল্ডিং দফতর ‘ছাঁকনি’-র কাজ করে। চূড়ান্ত অনুমোদন হয় এমবিসি-র মাধ্যমে। ফলে রাজ্য সরকারের সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়। তবে একই সঙ্গে এমবিসি-র এক সদস্যের সতর্ক মন্তব্য, ‘‘ইওডিবি প্রক্রিয়ায় নকশা অনুমোদনের কাজ দ্রুত হোক, সেটা সবাই চায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে নির্মাণবিধি যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকা দরকার। এ ব্যাপারে পুরসভার বিল্ডিং দফতরকে দায়িত্ব নিতেই হবে।’’ কেন বিল্ডিং দফতর প্রাথমিক ভাবে নকশা যাচাই করে তার পরে সেটা এমবিসি-তে পাঠায় না, সে সম্পর্কে জানতে এমবিসি-র আহ্বায়ক তথা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল অনিন্দ্য কারফর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।
পুরসভা সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, পুর কমিশনার এমবিসি-র চেয়ারম্যান হলেও তিনি অধিকাংশ সময়েই কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন না। অথচ এমবিসি-র সদস্যেরা প্রত্যেকে যাতে সমান ভাবে তাঁদের মতামত জানানোর সুযোগ পান এবং একই সঙ্গে নকশার আবেদনকারীরাও যাতে নিজেদের বক্তব্য ঠিক মতো জানাতে পারেন, তার জন্যও চেয়ারম্যানের বৈঠকে উপস্থিত থাকা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। এমবিসি-র এক প্রাক্তন সদস্য জানাচ্ছেন, এমনটা হতে পারে, কোনও একটি বিষয়ে কমিটির দু’-এক জন সদস্য এবং নকশার আবেদনকারীর মধ্যে মতান্তর হচ্ছে। হয়তো এক পক্ষ ঠিক বলছে, আর এক পক্ষ ঠিক বলছে না। ওই প্রাক্তন সদস্যের কথায়, ‘‘এমন ক্ষেত্রে বৈঠকের প্রধান হিসেবে পুর কমিশনারকেই ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিতে হয়। ফলে তাঁর উপস্থিতির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আগে পুর কমিশনার উপস্থিত থাকতেন। এখন কী হয়, বলতে পারব না।’’