ফাইল চিত্র।
বাজেট থেকে শুরু করে পুজোর প্রস্তুতি— সবেতেই এত দিন কাঁটা ছিল করোনা। দেরিতে হলেও এ বার আস্তে আস্তে পুজোর প্রস্তুতি শুরু করেছিল পুজো কমিটিগুলি। কিন্তু পুজোর এক মাস আগে, উপ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতেই ফের পুজো নিয়ে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার পুজো কমিটিগুলিকে। শেষ মুহূর্তে বাজেট বাড়িয়ে, সরকারি কোভিড-বিধি মেনেই পুজো করার ইচ্ছে রয়েছে কোনও কোনও কমিটির। কেউ কেউ আবার এ বছর নমো নমো করে পুজো সেরে দেওয়ার পক্ষপাতী।
পুজোর বাকি আর এক মাসেরও কম। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেও গত বছরের মতো এ বারেও কোভিড-বিধি মেনে পুজোর আয়োজনে সায় দিয়েছে রাজ্য সরকার। এমনকি বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলির জন্য রাজ্য সরকারের তরফে অনুদানও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উপনির্বাচনের কারণে পুজো সংক্রান্ত ভাবনা বাড়ছে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার পুজো কমিটিগুলির। ভোট উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে যেতে পারেন বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত কর্মকর্তাদের একাংশ। সে ক্ষেত্রে পুজোর প্রস্তুতিতে যাতে কোনও
ঘাটতি না হয়, সে জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি রাখার কথাও ভাবতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
করোনা আর ভোটের গেরোয় এলাকার ছোট পুজোগুলির তেমন অসুবিধা না হলেও বাড়তি মাথা ঘামাতে হচ্ছে বড় বড় পুজো কমিটিগুলিকে। ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার অন্যতম পুজো ‘বকুলবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব’। করোনা এবং নির্বাচনের গেরোয় এ বার তাদের পুজোর বাজেট কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকায়। এই পুজোমণ্ডপ থেকে এলাকার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দূরত্ব মাত্র ২০ মিটার। ফলে ভোটের কিছু দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত আদৌ মণ্ডপ তৈরির কোনও কাজ করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটের নিয়মের বাইরে গিয়ে তো কিছু করা সম্ভব নয়। ওই ক’টা দিন কোনও কাজ করা যাবে না, এমনটা ধরে নিয়েই পুজোর প্রস্তুতির যাবতীয় পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাজেট বাড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও এ বছর উপায় নেই। সব আনন্দ পরের বছরের জন্য তুলে রাখছি।’’
পুজোর আগেই ভোটের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, এমনটা ভেবে নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ‘চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’র উদ্যোক্তাদের কয়েক জন। সেই সঙ্গে ভোটের আগেই পুজোর প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে রাখতে চাইছেন তাঁরা। উপ নির্বাচনের কারণে আগেভাগে পুজো উদ্বোধনের দিনক্ষণও ঘোষণা করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেই স্থির হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোরা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘জানুয়ারি থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এলাকায় উপনির্বাচনের ঘোষণা হওয়ায় পুজো নিয়ে প্রশাসনিক সভাগুলিতে আমরা অংশ নিতে পারছি না। এতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পুজোমণ্ডপের খুব কাছে না হওয়ায় সেটা একটা রক্ষে।’’
ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার অন্যতম বড় বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ‘চেতলা অগ্রণী’র আহ্বায়ক সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতি বছরই শিল্পীরা আমাদের মণ্ডপ তৈরির দায়িত্বে থাকেন। তাই ভোটের কোনও প্রভাব পুজোর প্রস্তুতিতে পড়বে না।’’ তবে ভোটকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের তরফে কোনও বিধিনিষেধ আসতে পারে, এই আশঙ্কায় যাবতীয় কাজ আগেভাগে শেষ করতে উদ্যোক্তারা কোমর বেঁধে নতুন ভাবে পরিকল্পনা করছেন বলে জানাচ্ছেন তিনি।