গত পয়লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের তরফে দেশের প্রতিটি রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ৭৫ মাইক্রন বা তার বেশি পুরু না হলে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তার পরে চার মাস পেরোতে চললেও নয়া বিধি শহরের বেশির ভাগ জায়গাতেই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। উত্তরের শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণের যাদবপুর, শহরের প্রায় সর্বত্রই দোকান-বাজারে পাতলা প্লাস্টিকের রমরমা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধি যে মান্যতা পাচ্ছে না, তা স্বীকার করে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের সাফাই, ‘‘কেবল আইন করে কিছু হবে না। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে হবে।’’
অথচ, ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য কেউ যাতে ব্যবহার না করেন, তা নিশ্চিত করতে গত পয়লা জুলাইয়ের আগে থেকেই কলকাতা পুরসভার তরফে প্রচার চালানো হয়েছিল। গত জুন মাসে নিউ মার্কেটে এক প্রচারাভিযানে শামিল হয়ে খোদ মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) জানিয়েছিলেন, ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার করলে বিক্রেতাদের ৫০০ টাকা ও ক্রেতাদের ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। কিন্তু বাস্তবে চার মাস পরেও মেয়র পারিষদের সেই ঘোষণা স্রেফ কথার কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পুর কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়ম ভাঙার জন্য এক জনকেও জরিমানা করা হয়নি।
পুরসভার পরিবেশ বিভাগের আধিকারিকদের মতে, জরিমানা চালু না করলে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে না। যদিও এ বিষয়ে মেয়র পারিষদের (পরিবেশ) যুক্তি, ‘‘আমরা কত মানুষকে জরিমানা করব? নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বাইরের রাজ্য থেকে আসছে। সেখান থেকে যাতে প্লাস্টিকের সরবরাহ বন্ধ হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক। স্রেফ জরিমানা করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, ‘‘৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার ঘোষণাটা এখনও খাতায়-কলমেই রয়েছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। জনসাধারণও এ বিষয়ে অজ্ঞ।’’
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছিল, ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ক্যারিব্যাগ, র্যাপার, কাপ, প্লেট বা প্যাকেট ব্যবহার করা যাবে না। পুরসভার পরিবেশ বিভাগের আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, পুজোর মাসে কোনও রকম নিয়মই মানা হয়নি। কিন্তু নিয়মভঙ্গ হচ্ছে জেনেও পুরসভা কেন নিয়মিত অভিযানে যাচ্ছে না? পুর পরিবেশ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মাত্র ২০ জন কর্মীকে নিয়ে বিভাগ চলে। পুকুর ভরাট আটকানো থেকে শুরু করে হেরিটেজ ভবনগুলিকে নজরে রাখা— সবই এই ২০ জনের কাঁধে। এত কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সামলানো মুশকিল।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার ঠেকাতে বাজার ও লাইসেন্স বিভাগকেও কাজে লাগানো হয়েছিল। গত জুলাই মাসে পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল, ওই দু’টি বিভাগের বিভিন্ন দল পরিবেশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে। কিন্তু অভিযোগ, গত চার মাসে শহরে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে পুরসভা পুরোপুরি ব্যর্থ।
কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘কেবল পরিবেশ দিবসে ঘটা করে অনুষ্ঠান করা ছাড়া পুরসভার পরিবেশ বিভাগের ভূমিকা শূ্ন্য।’’ আর মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপনের আশ্বাস, ‘‘ছটপুজোর পরে পুরসভা-পুলিশ মিলে শহরের বাজারে বাজারে অভিযান শুরু হবে।’’