NRS Hospital

Puppies: এনআরএস-কাণ্ডে বেঁচে যাওয়া দুইয়ের ঠিকানা থানা

ওদের এই ঠিকানা প্রাপ্তি অবশ্য মানিকতলা থানার বর্তমান অফিসার ইন-চার্জ মৃণালকান্তি মুখোপাধ্যায়ের সৌজন্যে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

স্নেহ: কালু-ভুলু ও অন্য দু’টি কুকুরের সঙ্গে ওসি মৃণালবাবু। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

২০১৯ সালের জানুয়ারি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে খুন করার সময়ে আশপাশেই ছিল ওরা। সে যাত্রায় কোনওক্রমে লুকিয়ে বেঁচেছিল দুই শাবক। এখন তারা কেমন আছে?

Advertisement

জানতে গেলে পৌঁছে যেতে হবে মানিকতলা থানায়। সেখানে ঢুকতেই চিৎকার করে আহ্বান জানিয়ে ছুটে এল দু’জন। থানার এক পুলিশকর্মী কপট ধমকে বলে উঠলেন, ‘‘আবার বাইরে এসেছিস! যা, তোদের ঘরে যা।’’ আদেশ পেয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে ‘আস্তানা’র দিকে দৌড় লাগাল কালু-ভুলু। সে দিকে তাকিয়ে পুলিশকর্মীর আশ্বাস, “কামড়ায় না। কেউ এলে শুধু বেরিয়ে আসে।’’

ওদের এই ঠিকানা প্রাপ্তি অবশ্য মানিকতলা থানার বর্তমান অফিসার ইন-চার্জ মৃণালকান্তি মুখোপাধ্যায়ের সৌজন্যে। তিনিই সন্তান স্নেহে ওদের আগলে রেখেছেন। এনআরএস-কাণ্ডের সময়ে রিজেন্ট পার্ক থানায় অফিসার ইন-চার্জের পদে ছিলেন মৃণালবাবু। এনআরএসের ঘটনার পরে দু’টি কুকুরছানা জীবিত থাকার খবর শুনে খোঁজ শুরু করেন তিনি। জানা যায়, কুকুর দু’টি একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের কাছে রয়েছে। সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কুকুর দু’টিকে রিজেন্ট পার্ক থানায় নিয়ে আসেন তিনি। তার পর থেকে মৃণালবাবুর সঙ্গী কালু-ভুলু। ডায়েরিতে নোট নেওয়া থেকে অভিযুক্তকে কড়া গলায় জিজ্ঞাসাবাদ, সবেরই সাক্ষী দুই মানিকজোড়। অপরাধীদের প্রথমে কালু-ভুলুর কড়া নজরের মুখোমুখি হতে হয়।

Advertisement

বছরখানেক আগে বদলি হয়ে মৃণালবাবু মানিকতলা থানায় চলে আসেন। তাঁর সঙ্গেই ঠিকানা বদলেছে কালু-ভুলুর। নতুন ঠিকানায় এসে তাদের দু’টি সঙ্গীও জুটেছে। চার জনের জন্য থানার ভিতরেই একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে রয়েছে পাখার হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা। ওসির তত্ত্বাবধানে থানাতেই তাদের জন্য তিনবেলা রান্না করা হয়। এক দিন অন্তর থাকে মাংসের আয়োজন। নিয়মিত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয় বলেও থানা সূত্রে জানা গেল। মানিকতলা থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘কাজের চাপে আমাদের সময়ে খাওয়া হোক বা না হোক, ওদের ঠিক সময় মেনেই খেতে দেওয়া হয়।’’

মৃণালকান্তিবাবু বলেন, ‘‘১৬টা কুকুরছানার মর্মান্তিক পরিণতি শুনে স্থির থাকতে পারিনি। বেঁচে থাকা এই দু’জনের পাশে দাঁড়াতে হবে মনে হয়েছিল। এদের এমন মায়া যে থানা বদল হলেও ফেলে আসা যায় না। ওরাও তাই সঙ্গী।’’

এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সব শুনে তিনি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ শুনে সত্যিই ভাল লাগছে। সমাজের জন্য এটা শিক্ষা। ওঁর এই ভূমিকা পথপশুদের প্রতি সমাজের একাংশের বিদ্বেষমূলক মনোভাব কিছুটা হলেও পাল্টাবে বলে আশা করছি।’’

“ওদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ কী ভাবে আসে বলুন তো?” প্রশ্নটা করেছিলেন সেই পুলিশকর্মী। “দেখুন তো এক বার’’ বলেই ‘কালু-কালু’ ডাক পাড়লেন। লেজ নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে এল সে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি বলেন, “হ্যান্ড শেক করে দাও তো এক বার।’’ সামনের এক পা তুলে হাতের মতোই এগিয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য ধাক্কা দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিল থরে থরে পড়ে
থাকা ১৬টি শাবকের বিকৃত মুখ-সহ নিথ‍র দেহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement