ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বইমেলা হবে। মেলার দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কিছুটা হলেও অবনতি হওয়ায় কলকাতা বইমেলার আকাশে ফের ঘনীভূত আশঙ্কার মেঘ। যদিও বইমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড জানিয়েছে, প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে বলেন, “স্টল বুকিং থেকে শুরু করে বইমেলার যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। আমরা করোনা-বিধি মেনেই মেলার আয়োজন করছি। পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা বলে প্রস্তুতি তো থামিয়ে রাখা যাবে না। এর পরে
কিছু অন্য রকম হলে সেই বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, করোনার ভ্রুকুটি আছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে বইমেলার প্রস্তুতিও জোরকদমে চলছে। ৯০ শতাংশ স্টল বুকিং শেষ। আগামী ৭, ১০ এবং ১১ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মহাবোধি সোসাইটিতে লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্টল বিতরণ করা হবে।
ত্রিদিববাবু বলেন, “করোনা-বিধি মেনে বইমেলা করার জন্য এ বার আমরা স্টলের আয়তন ছোট করে মাঠ আরও বেশি খোলামেলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ ত্রিদিববাবু
জানান, আশা করা হচ্ছে যাঁরা স্টল দেবেন, তাঁদের সকলেরই প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি ডোজ় নেওয়া না থাকলে অবশ্য সরকার যদি কোনও ব্যবস্থা নেয়, তা হলে তার দায় বইমেলা কমিটির নয়। সব মিলিয়ে এ বারের বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের উৎসাহ খুব বেশি।”
এ বার বইমেলা নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ত্রিদিববাবু। তিনি জানান, বইমেলায় ড্রোন দিয়ে নজরদারি চলবে। সেই সঙ্গে এ বারের বইমেলা ডিজিটালও। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসে কলকাতা বইমেলার কিছুটা অংশ লাইভ দেখার সুযোগ মিলবে বইপ্রেমীদের।
ফের কোভিডের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বইপাড়ার প্রকাশকদের একাংশ কিছুটা হলেও আশঙ্কিত। তাঁদের বেশির ভাগই জানিয়েছেন, বইমেলায় স্টল বুকিংয়ের টাকা তাঁরা দিয়ে দিয়েছেন। এ বার বইমেলা না হলে সেই টাকা তাঁরা ফেরত পাবেন। সেটা নিয়ে চিন্তা নেই।
তবে বইমেলা উপলক্ষে প্রায় প্রত্যেক প্রকাশকই নতুন বই ছাপান। সেই নতুন বইয়ের জন্য ইতিমধ্যে কাগজ কিনে ফেলেছেন তাঁরা। ছাপার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। বইমেলায় যত তাড়াতাড়ি বই বিক্রি হয়, এমনিতে দোকানে তত সহজে বিক্রি না-ও হতে পারে। ফলে বইমেলা বাতিল হলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।
সেই সঙ্গে প্রকাশকদের একাংশের আরও আশঙ্কা, আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে কলকাতার কিছু এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন হয়ে গেলে যদি তার মধ্যে বইপাড়াও পড়ে,
তা হলে প্রকাশনার কাজে বিঘ্ন ঘটবে। এমনকি, প্রকাশনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা বইপাড়ায় যাতায়াতে বাধা পেতে পারেন। অথচ মেলার আগে কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে।
কলেজ স্ট্রিটের এক প্রকাশকের কথায়, “এমনিতেই করোনা আবহে বইপাড়া ধুঁকছে। বইমেলা ঘিরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া সবেমাত্র শুরু হয়েছিল। সেখানে ফের
অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও আমরা আশাবাদী যে, বইমেলা আগামী বছর হচ্ছেই।”