বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
বইমেলার শেষ দিনেও বইপ্রেমীদের ভিড়ে মিশল আদালতের কথা। রবিবার বইমেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের জবাব দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
গত শুক্রবার এজলাসে বসে বিচারপতি বসুকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯১১ জন গ্রুপ-ডি কর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়ে এজলাস ছেড়ে বেরনোর সময় বিচারপতি বলেন, ‘‘বিচারপতি বসু দয়ার সাগর। কিন্তু আমি তা নই।’’ নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা প্রসঙ্গেই ওই মন্তব্য। কারণ, এই মুহূর্তে কলকাতা হাই কোর্টের এই দুই বিচারপতিরই বিচারাধীন নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলা। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কড়া পদক্ষেপও করেছেন। তিনি ‘দয়ার সাগর’ নন বলে সম্ভবত সে কথাই বলতে চেয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার বইমেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সে কথার জবাব দিলেন বিচারপতি বসু। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি দয়ার সাগর নই। আমি কাজ করতে চাইছি সব পক্ষের বক্তব্য শুনে। অকারণে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, পরবর্তী সময়ে তার মুখোমুখি হতে হবে। তাই সবাইকে শুনে সব পক্ষের যুক্তি বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেব।’’ যদিও একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় হয়তো যা বলেছেন, তা আসলে বোঝাতে চাননি।’’
গত সপ্তাহে বইমেলায় এসেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও। বইমেলার স্টলে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এমনকি, সেই বইয়ে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, বইমেলায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছু বার্তাও দেন। চাকরিপ্রার্থীদের ভরসা দিয়ে বলেন, ‘‘লড়ে যান। জয় আসবেই।’’ আবার কখনও কখনও তাঁকে এমনও বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘সবার উপর সংবিধান এবং আইন সত্য। আমি ভগবান নই। সংবিধানই ভগবান।’’ সোজা কথায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বইমেলা সফরেও ঘুরে ফিরে এসেছিল নিয়োগ দুর্নীতির কথা। যেমনটা হয়েছে বিচারপতি বসুর ক্ষেত্রেও।
তবে রবিবার বইমেলায় গিয়ে রাজ্য সরকারের একটি নীতির প্রশংসাও করেছেন বিচারপতি বসু। সম্প্রতিই শিক্ষকদের বদলি নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করেছে রাজ্য। বিচারপতি বসুই এ ব্যাপারে একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, যখন তখন শিক্ষকদের বদলি হতে পারে না। বদলির আগে ছাত্রদের কথাও ভাবতে হবে। রবিবার এ প্রসঙ্গে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘শিক্ষক বদলি নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্ত ভাল। সবার দিক থেকে উৎসাহ পাচ্ছি। অচলায়তন ভাঙছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা ক্ষেত্রে আর কারও স্বার্থ নয় শুধু ছাত্রদের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে।’’
রবিবার বইমেলার বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে ঘুরে কবিতার বই কেনেন বিচারপতি বসু। তিনি জানান, প্রতি বছরই বইমেলায় আসেন। আইনের বইয়ের বাইরে কবিতার বই পড়তে ভালবাসেন। বইমেলায় পুরনো কবিতার বই খুঁজতেই আসা। সস্ত্রীক বইমেলা সফরে বিচারপতি কিনেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা সমগ্রের ছ’টি ভাগ। এ ছাড়াও সুচিত্রা ভট্টাচার্য-সহ বিভিন্ন লেখকলেখিকার বই কিনেছেন বলে জানা গিয়েছে।