যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় (বাঁ দিকে) এবং অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এখনও উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনার জলপাই পোশাক পরে কারা ঢুকলেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কেন্দ্র অরবিন্দ ভবনের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায় সেনার পোশাকে সজ্জিত ২০ জনকে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল যে, এই মামলায় লালবাজারে তলব করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে। শুক্রবার লালবাজার সূত্রে জানা যায়, এই মামলায় রেজিস্ট্রারের পাশাপাশি তলব করা হচ্ছে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কেও। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে এই মামলায় নোটিস দিতে চলেছে লালবাজার।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুরের হস্টেল থেকে ছাত্রের পড়ে যাওয়ার ঘটনার পরই হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী গেরুয়া শিবির। অনেকে এমনও দাবি করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুও জানিয়েছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। এর মধ্যেই বুধবার সকালে হঠাৎ দেখা যায় ক্যাম্পাসে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেনা উর্দিধারীরা। কারা এঁরা? ভারতীয় সেনার কর্মী? না কি আধাসেনা? এমন প্রশ্ন ঘুরেফিরে উঠছিল বুধবার দিনভর। পুলিশের কাছেও খবর পৌঁছয়। এর পরই বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় মামলা করে পুলিশ।
ওই মামলায় বলা হয়েছে, যাদবপুর থানার এক সাব ইন্সপেক্টরের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা করা হচ্ছে। গত বুধবার বিকেল ৪টে ২০ মিনিটে কাজি সাদেক হোসেন নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল প্রবেশ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এঁদের প্রত্যেকেরই পরনে ছিল সেনাদের মতো পোশাক। মাথায় লাল টুপিতে লেখা ছিল ‘ভারতীয় সেনা’। ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় সেনার প্রতীকও। জানা গিয়েছে, ওই দলটি ‘এশিয়ান হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থার। কাজি ওই সংস্থার সাধারণ সচিব। কাজিকে ইতিমধ্যেই এই মামলায় ডাকা হয়েছে। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিনের কাছে উপযুক্ত স্থান জানতে চেয়েছে লালবাজার। পুলিশ এই ঘটনায় ভারতীয় সেনার নাম এবং প্রতীক অপব্যবহার করার জন্য মামলা দায়ের করছে।
বুধবার ওই সেনার উর্দিধারীদের প্রশ্ন করে জানা গিয়েছিল, তাঁরা সেনা বা আধাসেনা কোনও পক্ষ থেকেই আসেননি। সেনার নকল পোশাক পরে আসা ওই দলের নেতা দাবি করেন, “আমরা বিশ্ব শান্তি সেনা।” যদিও কেন তাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসেছেন, কারাই বা তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। পুলিশ এই সব প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজবে বলে সূত্রের খবর।
অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়ামৃত্যুর মূল মামলায় যাদবপুরের মেন হস্টেলের বেশ কয়েক জন আবাসিককে ডেকে পাঠিয়েছে লালবাজার। এই আবাসিকদের এর আগে ডাকা হয়নি। শুক্রবারই পাঁচ-ছ’জনের পুলিশের মুখোমুখি হওয়ার কথা। ওই আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ খুঁজে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।