স্মার্ট আইসিইউ বিভাগের সূচনায় দমকলমন্ত্রী সুজিত বোস এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সংকটজনক রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা মুখের কথা নয়। তবে সংকটজনক রোগীদের প্রাণ বাঁচানোর একটি জাদুদণ্ডও রয়েছে চিকিৎসকদের হাতে। সেই জাদুদণ্ডের নাম হল ক্রিটিকাল কেয়ার। যার ছোঁয়ায় গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রেখে, সব রকমের মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এ বার জোট বেঁধেছে স্মার্ট ফোনের সঙ্গে! আর পূর্ব ভারতে প্রথম সেই স্মার্ট প্রযুক্তির সূচনা হল কলকাতাতেই।
সল্টলেকের এইচপি ঘোষ হাসপাতালে এই স্মার্ট প্রযুক্তির আইসিইউ বা স্মার্ট আইসিইউ চালু হয়েছে। ৪৩ শয্যার সেই আইসিইউ ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে দুই ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হীরক ভট্টাচার্য এবং চিকিৎসক তৃণাঞ্জন সারেঙ্গীর তত্ত্ববধানে। এই আইসিইউ বিভাগের সূচনা করতে শুক্রবার হাজির ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বোস এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
স্মার্ট প্রযুক্তির এই আইসিইউ বা স্মার্ট আইসিইউয়ের সুবিধা হল, এর সাহায্যে চিকিৎসক যেখানেই থাকুন, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে অবিলম্বে স্বচক্ষে দেখে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন। একই সঙ্গে স্মার্টফোনে নিখুঁত ভাবে জেনে নিতে পারবেন রোগীর নানা গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক মানদণ্ড। এর ফলে দ্রুত চিকিৎসা এগনো সম্ভব হবে। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিলে রোগীকে স্থিতিশীল রাখাও সহজ হবে। তা ছাড়া, সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নজরদারি থাকায় জটিল রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অন্তত ৪০ শতাংশ কমানো যাবে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
হীরকের কথায়, ‘‘হার্ট অ্যাটাক, হেমারেজিক বা ইস্কিমিক ব্রেন স্ট্রোক, নিউমোনিয়া, সিওপিডি অথবা অ্যাজমার কারণে শ্বাসকষ্ট, দুর্ঘটনায় গুরুতর চোট, ওষুধের কোনও বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ওষুধে অ্যালার্জির জন্যে শ্বাসনালি ফুলে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, কিংবা অন্যান্য গুরুতর অসুখেও যদি হার্ট, কিডনি, ফুসফুস বা লিভারের মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজ যদি সাময়িক ভাবে বিপর্যস্ত হয়, তবে রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। এই ধরনের রোগীদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সব সময় চিকিৎসকের নজরে থাকলে বিপদ এড়ানো যেতে পারে।’’
তৃণাঞ্জনের মতে, ‘‘অসুস্থ মানুষটির অবস্থার অবনতি হবার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ অ্যালার্ম আইসিইউ-এ কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালট্যান্টকেও সতর্ক করে দেবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের মোবাইলে রোগীর যাবতীয় প্যারামিটার ও টেস্টের রিপোর্ট দেখা যাবে। ফলে চিকিৎসক অকুলস্থলে না থাকলেও রেসিডেন্ট ডাক্তারকে ফোনে সব নির্দেশ দিতে পারবেন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় রোগীও উপকৃত হবেন।’’
ইস্টার্ন ইন্ডিয়া হার্ট কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অগ্রণী এইচপি হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সোমনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা কলকাতা-সহ বাংলা এবং পূর্ব ভারতের মানুষকে চিকিৎসার সুপরিষেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই লক্ষ্যপূরণেই এই পদক্ষেপ করেছেন।