সব ঠিকঠাক চললে আগামী অগস্ট মাসে নবকলেবরে দেখা যেতে পারে কালীঘাট মন্দিরকে। —ফাইল চিত্র।
সব ঠিকঠাক চললে আগামী অগস্ট মাসে নবকলেবরে দেখা যেতে পারে কালীঘাট মন্দিরকে। সেই সঙ্গে উদ্বোধন হবে নতুন স্কাইওয়াকের। পয়লা বৈশাখের আগের দিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন। মন্দির সংস্কারের যাবতীয় কাজকর্ম খতিয়ে দেখে গিয়েছেন তিনি। সংস্কারের কাজ কেমন চলছে, তা নিয়েও মন্দির কমিটির শীর্ষকর্তাদের থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। পরে মন্দির থেকে বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়ে দেন, আগামী অগস্ট মাসে কালীঘাটের নতুন স্কাইওয়াকের উদ্বোধন হবে। তখন থেকেই কালীভক্তদের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, কবে নতুন রূপে দেখা যাবে কালীঘাট মন্দিরকে? সম্প্রতি কালীঘাট মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ভাবে সংস্কারের কাজ এগোচ্ছে, তাতে আগামী অগস্ট মাসে কালীঘাট মন্দিরকে নতুন রূপে দেখা যাবে।
২০১৯ সাল থেকে কালীঘাট মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভাকে। মন্দির কমিটি ও পুরসভার মধ্যে স্থির হয়, ১৮ মাসের মধ্যে কালীঘাট মন্দির সংস্কার করা হবে। সেই মতো কাজও শুরু হয়। কিন্তু মন্দির কমিটি অভিযোগ করে, ১৮ মাসের মধ্যে মন্দির সংস্কারের কথা বলা হলেও, প্রায় চার বছর ধরে মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। তাই শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাট মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব রিলায়্যান্স গোষ্ঠীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মন্দির কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের পয়লা বৈশাখের আগের দিন সন্ধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় কমিটির কাছে মন্দির সংস্কারের বিষয়ে জানতে চান মমতা। তখনই মন্দির কমিটির তরফে সংস্কারের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানানো হয়।
মন্দির কমিটির একাংশের দাবি, সেই সময় মন্দির সংস্কারে বিলম্ব হওয়ার কথা শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই তিনি উদ্যোগী হয়ে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীকে মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব নিতে বলেন। তার ফলস্বরূপ ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে মন্দির সংস্কারের কাজে হাত দেয় তারা। প্রথমে ঠিক ছিল, ছ’মাস রিলায়্যান্স গোষ্ঠী সংস্কারের কাজ করবে। গত বছর ডিসেম্বর মাসের সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই মনে করা হচ্ছে, আগামী অগস্ট মাসে নবকলেবরে দেখা যাবে কালীঘাট মন্দিরকে।
মন্দির কমিটির পাল্টা কলকাতা পুরসভার দাবি, ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে কোভিড অতিমারির সূচনা হয়। তার পর দীর্ঘ লকডাউনে মন্দির সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এ ছাড়া, কালীঘাট মন্দির চত্বর থেকে দোকান সরাতে পুরসভা কর্তৃপক্ষকে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা-ও মন্দির কমিটির জানার কথা। আর বিভিন্ন পার্বণ, অমাবস্যা, পূর্ণিমা তিথি-সহ এমন অনেক দিন রয়েছে, যখন মন্দিরে এত বেশি ভক্তদের সমাগম হয়, ফলে ইচ্ছে থাকলেও কাজ করতে পারেনি পুরসভা।
অন্য দিকে, মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, মা কালীর মূল মন্দির, গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির, কুণ্ডপুকুর, মন্দিরের চাতাল-সহ ভিতরে এবং বাইরের দেওয়াল, বলির জায়গা-সহ গোটা মন্দির চত্বর সংস্কার হচ্ছে। তবে সংস্কারের যাবতীয় কাজ হচ্ছে কালীঘাট মন্দিরের ঐতিহ্য বজায় রেখেই। মা কালীর গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির গ্রেড ‘এ’ হেরিটেজের তালিকাভুক্ত। তাই সংস্কারের জন্য এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি ও হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি প্রয়োজন ছিল। পুরসভা ও হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি পাওয়া যায় কয়েক মাস আগে। তাই কালীপুজোর পর মূল মন্দির ও গর্ভগৃহের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। সব কাজ শেষ হলে আগামী অগস্ট মাসে নতুন ভাবে সংস্কার হওয়া মন্দির কমিটির হাতে তুলে দিতে পারে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী।