মণিপাল হাসপাতালের সামনে আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। সোমবার প্রথম দিনেই কলকাতার একগুচ্ছ হাসপাতালে ‘প্রতীকী কর্মবিরতি’ চলল। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এমন সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ বেনজির। আগেও বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। তবে সেটা স্বতন্ত্র ভাবে। যে হাসপাতালে অবাঞ্ছিত কোনও ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু একটি হাসপাতালের ঘটনার প্রেক্ষিতে এ ভাবে একজোট হয়ে কর্মবিরতি পালন হয়নি। শুধু কলকাতাই নয়, হাওড়া থেকে কোচবিহার, বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের ঝাঁজ।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত, আটচল্লিশ ঘণ্টা ‘প্রতীকী কর্মবিরতি’র ডাক দেন বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। জানিয়ে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সোমবার কলকাতায় অ্যাপোলো, মণিপাল, মেডিকা, আর এন টেগোর, ফর্টিস, চার্নক, পিয়ারলেস, উডল্যান্ডস মাল্টি স্পেশালিটি, সিএমআরআই, বিএম বিড়লা, কোঠারি এবং বেহালার নারায়ণা স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আংশিক কর্মরিরতির ঘোষণা করেছেন তাঁরা। পিয়ারলেস হাসপাতালে ১২ ঘণ্টার অনশন করেন চিকিৎসকেরা।
হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রতীকী অনশন এবং কর্মবিরতি পালন করেছেন। হাসপাতালের ওপিডি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। জরুরি পরিষেবা অবশ্য মিলেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সমব্যথী। মানস খাঁ নামে এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছি। অনশনের জেরে একে একে ডাক্তারেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চাই, সরকারি হস্তক্ষেপে দ্রুত এই অচলাবস্থা মিটে যাক। আরজি করের ঘটনার দ্রুত বিচার হোক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারের উচিত এগিয়ে এসে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।’’
বস্তুত, ১০ দফা দাবি নিয়ে গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশন করছেন কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার। শুধু কলকাতায় নয়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও দুই জুনিয়র ডাক্তার অনশন শুরু করেন। সোমবার অনশন নবম দিনে পড়েছে। সকল অনশনকারীর শারীরিক অবস্থারই অবনতি ঘটছে। শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। ইতিমধ্যে তিন অনশনকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা। এমনকি, সময় বেঁধে দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। তার মধ্যে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) আগামী মঙ্গলবার দেশ জুড়ে ১২ ঘণ্টা প্রতীকী অনশনের ডাক দেয়। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে আরজি কর মামলার শুনানিও। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছিলেন জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী সরকারপক্ষ। তিনি আইএমএ-সহ ১২টি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু বৈঠকে সব কিছু নেতিবাচক হয়েছে, এমনটা মানতে নারাজ মুখ্যসচিব। তিনি জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে সাতটির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে বাকি তিনটি দাবি কবে পূরণ হবে, সেই ‘টাইমলাইন’ (সময়সীমা) দেওয়া সম্ভব নয়।
তাঁদের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে চিকিৎসক বিনায়ক রায় কোচবিহারে বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে করে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটে ডাক দিয়েছিলাম আমরা। সমস্ত চেম্বার বন্ধ রাখা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা কয়েক দিন ধরে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের ভ্রূক্ষেপ নেই।’’ তিনি মেনে নেন, এর ফলে সাধারণ মানুষের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু চিকিৎসকদের আন্দোলন সাধারণ মানুষের স্বার্থেই।