নাখোদা মসজিদ চত্বরে টুপি কিনতে এসেছেন সংগ্রাম চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র
প্রতিবাদীদের পোশাক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠিক কী বলেছিলেন, তা সরাসরি শোনেননি মহম্মদ ইসমাইল বা ওয়াসিম শেখ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মোটেই ভাল লাগেনি তাঁদের। তবে নাখোদা মসজিদের কাছে হিজাব আর বোরখার কারবারি ইসমাইল, ওয়াসিমেরা মানছেন, গত কয়েক দিনে মোদীজির মন্তব্যের পরেই তাঁদের পসার কিছুটা বেড়ে গিয়েছে।
টিভির পর্দায় নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথে নামা বিক্ষোভকারীদের পোশাক দেখেই নাকি প্রধানমন্ত্রী ‘চিনতে’ পেরেছিলেন, কারা আগুন লাগাচ্ছেন। দিন কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডে ভোটপ্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ঘিরে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। মোদীর ‘আপত্তিকর’ ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিট ও নিউ মার্কেটের কয়েকটি দোকান থেকে গত দু’দিনে হিজাব কিনেছেন অনেক অ-মুসলিম মহিলাও। নমাজ পড়ার টুপি কিনে বেশ কিছু অ-মুসলিম যুবকও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতায় প্রতীকী প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।
‘‘গত দু’দিন ধরে লক্ষ করছি, অ-মুসলিম তরুণীরাও জোট বেঁধে হিজাব কিনতে আসছেন। হঠাৎই দেখি হিজাব বিক্রি বেড়ে গিয়েছে,’’ বলছিলেন ইসমাইল। নাখোদা মসজিদ এলাকার আর একটি নামী কাপড়ের দোকানের কর্ণধার ওয়াসিম শেখ বললেন, ‘‘দিন দুয়েক আগে ওদের দেখেই জানতে চাই, তোমরা হিজাব কিনবে কেন? ওরা জানাল, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ধিক্কার জানাতেই ওদের এই সিদ্ধান্ত।’’ ওয়াসিমও জানান, গত কয়েক দিনে তাঁর দোকানে হিজাবের বিক্রি ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। নাখোদা মসজিদ লাগোয়া ফুটপাতে রকমারি টুপি বিক্রি করেন রহমত আনসারি। তাঁর কথায়, ‘‘দিন কয়েক ধরে দেখছি, অ-মুসলিম যুবকেরাও এসে টুপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। জানি না, ঠিক কী ব্যাপার!’’ উত্তর ২৪ পরগনার নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী এক সংগঠনের সম্পাদক সংগ্রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করতেই নাখোদা মসজিদ চত্বর থেকে ১০০টি টুপি, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি কিনেছি। ওই পোশাক পরেই জেলায় হিন্দু-মুসলিমরা মিলে মিছিল করব।’’
আরও পড়ুন: ‘বলেছে মিছিলে এলে ভয় নেই, তাই এলাম’
কবি জয় গোস্বামী বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক মুসলিম বন্ধু দুর্গাপুজোয় নতুন জামাকাপড়ে সেজে মণ্ডপে আসত! আমাদের উৎসব যে কখনও আলাদা, তা মনে হয়নি। পোশাক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।’’ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘আমি নিজেও বাড়িতে লুঙ্গি পরি। তা হলে কি আমি মুসলমান হয়ে গেলাম?’’ তাঁর মতে, ‘‘পোশাক তো বহিরঙ্গের বিষয়। কারও তো মুসলমানের পোশাক ভাল লাগতেই পারে। এক জন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এমন ছেলেমানুষি কথা বলা মানানসই নয়।’’
আরও পড়ুন: জোড়া মিছিল, সমাবেশে আবার আটকাল পথ
একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করে মানুষকে বিভাজনের এই চেষ্টার নিন্দা করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ক্লারে লিজ়ামিট স্যামলিং বা সংস্কৃত সাহিত্যের অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীও। প্রধানমন্ত্রীর কথাটি খারাপ লাগলেও সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হেসেই ফেলছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা মিরাতুন নাহার। তিনি বলেন, ‘‘জন্ম থেকে শুনে আসছি, আমাদের দেশ মানে ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান’! ভারতের মতাদর্শ জানা নেই বলেই প্রধানমন্ত্রী এমন ন্যক্কারজনক মন্তব্য করেছেন।’’