বিমানবন্দরের পার্কিং লটে অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র
ওঁদের কেউ থাকেন পশ্চিমবঙ্গে, কেউ ঝাড়খণ্ড বা বিহারে। কারও বাড়ি উত্তরপ্রদেশ। লকডাউন শিথিল হতেই দলে দলে কর্মস্থলে ফিরছেন ওঁরা। কেউ আন্দামানে, কেউ কেরলে।
ওঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। ট্রেন বন্ধ থাকায় ফিরছেন উড়ানে। যে সংস্থার হয়ে কাজ করতেন, তারাই বিমানের টিকিট কেটে শ্রমিকদের মোবাইলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেই টিকিট নিয়ে তাঁরা আসছেন বিমানবন্দরে। কিন্তু বিমানবন্দরের ভিতরের নিয়মকানুনের সঙ্গে তাঁরা সড়গড় নন। ফলে সময় মতো বোর্ডিং কার্ড না-পেয়ে অথবা ঠিক বোর্ডিং গেটে পৌঁছতে না-পেরে প্রায় রোজই একাধিক শ্রমিক উড়ান ধরতে পারছেন না।
অনেকে টিকিট বদলে পরের দিনের উড়ানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। টিকিট বদলাতে গিয়ে অনেককে টাকাও গুনাগার দিতে হচ্ছে। সাধারণ দিনে উড়ান ধরতে না-পারলে অসহায় এই মানুষগুলি টার্মিনালের বাইরে বা দোতলায় ৩সি গেটের ভিতরের লাউঞ্জে কোনও রকমে ২৪ ঘণ্টা কাটিয়ে পরের দিনের উড়ান ধরছেন। সব চেয়ে সমস্যায় পড়ছেন মাঝে লকডাউন হলে।
যেমন, বৃহস্পতিবার থেকে টানা দু’দিন লকডাউনের আগেই বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বীরেন্দ্র কুমার। বহুজাতিক নির্মাণ সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করেন আন্দামানে। লকডাউন শুরুর পরে জাহাজে চেপে বীরেন্দ্র বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। এখন সংস্থা চাইছে কাজ শুরু করতে। তাই মঙ্গলবার ভোরে বিমানবন্দরে হাজির হন উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে একসঙ্গে আসা ৩৫ জন শ্রমিক। সকালের উড়ানে তাঁদের পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছনোর কথা ছিল।
বিমানবন্দরের পার্কিং লটে শুয়ে-বসে থাকা ওই শ্রমিকেরা জানালেন, তাঁদের দলের ৩০ জন বিমানবন্দরে ঢুকে গেলেও পাঁচ জনের টিকিট নিয়ে সমস্যা হয়। কী সমস্যা, সেটা তাঁরা বোঝেননি। শেষে জানান, বিমান নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে দিয়েছে বলে তাঁরা যেতে পারেননি। তা হলে বুধবার কেন গেলেন না? বৃহস্পতি ও শুক্রবার তো উড়ান নেই। শনিবারের আগে তো যেতে পারবেন না!
বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘নিজেদের টিকিট কাটার ক্ষমতা বা টাকা আমাদের নেই। কোম্পানি বুধবার টিকিট কেটে পাঠিয়েছে। ২৫ তারিখ যাওয়া।’’ পাঁচ দিন থাকবেন কোথায়? বীরেন্দ্র জানিয়েছেন, কাল, শনিবার বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কাছের কোনও হোটেলে উঠবেন।
ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ থেকে আসা লক্ষ্মণ ঘোষেরা অবশ্য জানতেন না লকডাউনের কথা। তিরুঅনন্তপুরম যাওয়ার টিকিট কাটা ছিল আগেই। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে পৌঁছে শোনেন, উড়ান বাতিল। লক্ষ্মণ জানান, উড়ান না-পেয়ে টার্মিনালের বাইরে বসেছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে জানিয়ে দেন, বসে থাকা যাবে না। উপায় না-দেখে লক্ষ্মণেরা আশ্রয় নেন পার্কিং এলাকায়। লক্ষ্মণ জানান, আজ শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। সংস্থা টিকিট কেটে পাঠালে ভাল। না হলে শনিবার বাস ধরে ফিরে যাবেন সাহেবগঞ্জ।