৪৭ দিন একমো সাপোর্টে লড়াই করে সুস্থ অ্যাডিনো আক্রান্ত কিশোরী। প্রতীকী ছবি।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যেন ‘নবজন্ম’ হল কিশোরীর। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর হয়ে পড়েছিল। প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে লড়াই করে সুস্থ হয়ে উঠেছে সে।
১৫ বছরের সুদেষ্ণা বসু জ্বর এবং প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে আরও দুই হাসপাতালে কিশোরীকে নিয়ে ঘুরেছিলেন তার বাবা-মা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে তার শরীরে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সেই সঙ্গে তার নিউমোনিয়াও হয়েছিল। শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কমে যায় কিশোরীর। তাকে একমো সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, টানা ৪৭ দিন একমো সাপোর্টে লড়াই করে কিশোরী। সব মিলিয়ে ৬০ দিন সে ভেন্টিলেশনে ছিল। তবে হার মানেনি সুদেষ্ণা। বেশ কিছু দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর অবশেষে সুস্থ হয়েছে সে। শনিবার সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় কিশোরীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
সুদেষ্ণার বাবা সুকান্ত বসু বলেন, ‘‘গত ২১ জানুয়ারি স্কুল থেকে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে আমার মেয়ে। ওকে নিয়ে একাধিক হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করা হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। অবশেষে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে সুদেষ্ণাকে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ লড়াই করেছি আমরা সকলে। হাসপাতালে অনেক টাকা বিল হয়েছে। তবে বেশ কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে মূল খরচের উপর। চিকিৎসক এবং আর যাঁরা আমাদের এই লড়াইয়ে সাহায্য করেছেন, সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মেয়েকে যে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারছি, এতেই আমরা খুশি।’’
হাসপাতালের চিকিৎসক দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজ সুদেষ্ণার ছুটি হল। জানুয়ারি মাসে ও যখন ভর্তি হয়েছিল, ১০০ শতাংশ অক্সিজেন সাপোর্ট সত্ত্বেও ওর শরীরে অক্সিজেন পৌঁছচ্ছিল না। নিউমোনিয়া হলে একমোর দ্বারা রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাউডের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। সুদেষ্ণার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল। তখন জানতাম না ওর লড়াই দীর্ঘমেয়াদি হবে। ৬৬ দিন আমাদের হাসপাতালে থেকে ও বাড়ি গেল আজ। এটা আমাদের একমো টিমের জন্য খুবই আনন্দের কথা। সুদেষ্ণার বাবা, মায়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে, তাঁরা ভরসা রেখেছিলেন সুদেষ্ণা সুস্থ হবে। কারণ এই ধরনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবার আস্থা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসা বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা বার বার বলেছি, সুদেষ্ণার ফুসফুস ছাড়া বাকি সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভাল রয়েছে। একমোর জন্যই ও সুস্থ হতে পেরেছে।’’
সম্প্রতি রাজ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়িয়েছে। শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ভাইরাসের প্রভাবে মৃত্যুও হচ্ছে কারও কারও। তবে অ্যাডিনো উদ্বেগের মাঝে সুদেষ্ণার লড়াই সাহস জোগাচ্ছে বাকি আক্রান্ত এবং তাদের পরিবারের মধ্যে।