যাত্রী-ভিড়ে বিমানবন্দর যেন পুজোর মণ্ডপ

টার্মিনাল থেকে বিমান পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টারও বেশি। উড়ান ধরতে পারবেন না, এই আশঙ্কায় অনেক ক্ষেত্রেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। তা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

প্রতীক্ষায়: কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীদের লম্বা লাইন। নিজস্ব চিত্র

এ যেন শহরের নামী কোনও পুজোর মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে এঁরা দর্শনার্থী নন, সকলেই যাত্রী। আর তাঁদের ভিড়ে হাঁসফাঁস করছে কলকাতা বিমানবন্দর।

Advertisement

সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা দিয়ে যেখানে ৫৭,৯৮০ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন, সেখানে অক্টোবরে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজারে। অর্থাৎ এক মাসে প্রায় ১০ হাজার বৃদ্ধি। নভেম্বরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত ইতিমধ্যেই যাত্রী-সংখ্যা ছুঁয়েছে ৭২ হাজার! সেই সংখ্যা মাসের শেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে আতঙ্কিত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদেরও। টার্মিনাল থেকে বিমান পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টারও বেশি। উড়ান ধরতে পারবেন না, এই আশঙ্কায় অনেক ক্ষেত্রেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। তা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করছেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন উড়ান সংস্থার কর্মীরা।

Advertisement

চেক-ইন কাউন্টারে যত না লাইন পড়ছে, তার চেয়ে বেশি লাইন পড়ছে সিকিওরিটি চেক-এ। যেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করেন এবং এক্স-রে মেশিনে তাঁদের হাতব্যাগ পরীক্ষা করা হয়। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডোমেস্টিক এলাকায় ১০টি এবং আন্তর্জাতিক এলাকায় ২টি এক্স-রে মেশিন দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়ি দু’জায়গাতেই আরও একটি করে এক্স-রে মেশিন বসানো হবে। আগামী এপ্রিলে ডোমেস্টিক এলাকার জন্য আরও চারটি এক্স-রে মেশিন আসছে।’’

চলতি বছরে মহালয়ার পরে আচমকা কলকাতা থেকে উড়ান সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্যই এই অবস্থা বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে। বলা হচ্ছে, মহালয়ার আগে শহর থেকে যেখানে গড়ে ১৭০টি উড়ান ছিল, নভেম্বরের মাঝামাঝি তা বেড়ে ২১৪টি হয়েছে। এর মধ্যে দু’-এক দিন উড়ান সংখ্যা দিনে আড়াইশো পর্যন্তও ছুঁয়েছে।

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যাত্রী সংখ্যা। এমনিতেই এখন ছুটির মরসুমে অর্থাৎ দুর্গাপুজোর পর থেকে বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকে। কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘এমন ভিড় এর আগে কখনও হয়নি। এর জন্য যাতে কোনও যাত্রীর উড়ান ছেড়ে চলে না যায়, আমরা আপ্রাণ সেই চেষ্টা করছি।’’ এখন দেশের মধ্যে (ডোমেস্টিক) যাতায়াতের ক্ষেত্রে উড়ান ছাড়ার দু’ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর কথা যাত্রীদের। প্রয়োজনে আরও একটু আগে তাঁদের আসার জন্য অনুরোধ করছেন কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ভোর থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভিড় হচ্ছে। দুপুরে তুলনায় একটু ফাঁকা থাকছে। আবার ভিড় বাড়ছে বিকেলের দিকে। কলকাতা থেকে নিয়মিত অন্য শহরে যাতায়াত করেন ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওয়েব চেক-ইন করি। তা-ও সকালের দিকে এখন শুধু সিকিওরিটি চেক-এর লাইনেই ২০ মিনিটের বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার গত রবিবার রাতের উড়ানে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলাম। তখন এত সময় লাগেনি।’’

আর এক যাত্রী সৈকত বসু দিন কয়েক আগে কলকাতা থেকে মুম্বই গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘যত যাত্রী, সেই তুলনায় এক্স-রে মেশিন কম। তাই সময় বেশি লাগছে। চেক-ইন এর সময়ে অবশ্য অতক্ষণ দাঁড়াতে হচ্ছে না।’’ অনেক যাত্রী এই অভিযোগও করেছেন, সম্প্রতি তল্লাশির সময়ে নিরাপত্তারক্ষীরা তুলনায় বেশি সময় লাগাচ্ছেন।

বিমানবন্দরের কর্তাদের কথায়, যাত্রীদের তল্লাশির ক্ষেত্রে আপস করা সম্ভব নয়। আশা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত এক্স-রে মেশিন এলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement