—প্রতীকী ছবি।
কলকাতা শহরে হকার সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু হকার নীতি স্থির করার ক্ষেত্রে এখনই কোনও পদক্ষেপ করছে না কলকাতা পুরসভা। আর এক মাস পরে শুরু হয়ে যাবে শারদোৎসব। সেই আবহে হকারদের নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা উচিত মনে করছে না কলকাতা পুরসভার প্রশাসন। পাশাপাশি এই সময় যেমন উৎসবের মরসুমের নান্দীমুখ হচ্ছে, অন্য দিকে তেমন আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত সরকার পক্ষ। এই পরিস্থিতিতে হকার নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। প্রতি দিন প্রায় আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হচ্ছে। যা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে। এমন অবস্থায় হকার নীতি কার্যকর করতে গেলে পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন। আরজি কর-কাণ্ড এবং পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত কলকাতা পুলিশের বড়, ছোট সব কর্তা। তাই ঠিক হয়েছে, হকারদের নিয়ে আপাতত উৎসবের মরসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কলকাতা পুরসভা।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে নবান্নে এক বৈঠক করে কলকাতা শহরের ফুটপাথ দখলদারমুক্ত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কাজ করতে একটি কমিটিও গড়ে দেন তিনি। সেই কাজ করতে কলকাতার ফুটপাথের হকারদের নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করে পুরসভা। সিদ্ধান্ত হয়, কলকাতা পুরসভার ১৬টি বোরো কমিটির হয়ে মোট ১১২টি দল কাজ করবে। প্রত্যেকটি দলে ছ’জন করে কর্মী থাকবেন। সব মিলিয়ে ৬৭২ জন কর্মীকে এই কাজে নামানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা পুরসভার তরফে কর্মীদের হকার সমীক্ষার কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ১৫০ জনকে। সমীক্ষার কাজ করতে এক একটি হকার জ়োনে কমবেশি ১০টি করে দল নামে। প্রতিটি দলে চার-পাঁচ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী এই কাজ শুরু করেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি এমন টিম নামানো হয়। কলকাতার কোন রাস্তায় কত হকার বসছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য অ্যাপে নথিভুক্ত করেছে পুরসভার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলটি। আপাতত হকার সমীক্ষার যাবতীয় তথ্য পুরসভার হাতে।
ইতিমধ্যেই একটি রিপোর্ট তৈরি করে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট টাউন ভেন্ডিং কমিটির কাছেও পেশ করা হবে।
কোন ধরনের হকার বেশি, কত জন কী ধরনের ব্যবসা করেন, সে সবও পৃথক ভাবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। হকার জ়োন বা ভেন্ডিং জ়োনে ক’জন হকার রয়েছেন, পুরসভার নির্ধারিত ভেন্ডিং জ়োনের বাইরে নন-ভেন্ডিং জ়োনে থাকা ফুটপাথে ক’জন হকার ব্যবসা চালাচ্ছেন, সেই তথ্য প্রায় ২৫ পাতার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। শহরের কোন রাস্তায় কোন ফুটপাথে কে ডালা বা স্টল নিয়ে বসেছেন, তিনি কতটা জায়গা নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন, তাঁর নাম, প্যান কার্ড, আধার কার্ড-সহ সংশ্লিষ্ট হকারের লোকেশন জিয়ো ট্যাগিং করে এই ডিজিটাল সমীক্ষা হয়েছে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট কার্যকর হলে, এক নামে একাধিক ডালা নিয়ে শহরের নানা ফুটপাথে হকারি করা যাবে না। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনা না ঘটলে হয়তো এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যেত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কলকাতা শহরে পুলিশ যে ভাবে ব্যস্ত রয়েছে, তাতে উৎসবের মরসুম শেষ হল তবেই হকার নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।