যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। —ফাইল চিত্র ।
যাদবপুরের পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলে সরব যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠন ‘ফেটসু’। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মদ্যপান, ধূমপান বা অন্যান্য মাদক সেবন কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয় বলেও জানিয়েছে সেই ছাত্র সংসদ। একই সঙ্গে ফেটসুর দাবি, সংগঠনের যে সব ছাত্রনেতা সমাজমাধ্যমে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক রাখবে না সংসদ। এই নিয়ে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি জারি করেছে ফেটসু।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘র্যাগিংয়ের কারণে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় স্বচ্ছ এবং দ্রুত তদন্ত করতে হবে। দোষীদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র্যাগিং রুখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শীঘ্রই বৈঠক ডাকারও দাবি তুলেছে যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠনটি। পাশাপাশি জানিয়েছে, বিভাগীয় নবীনবরণ-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নবাগত পড়ুয়াদের র্যাগিংয়ের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু তাদের সংগঠন কোনও রকমের র্যাগিংকেই সমর্থন করে না বলেও স্পষ্ট করেছে ফেটসু।
বেশ কয়েক দিন ধরে যাদবপুর চত্বরে প্রকাশ্যে মদ্যপান এবং ধূমপানের নানাবিধ অভিযোগ উঠে এসেছে সমাজমাধ্যমে। এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে (যদিও সেই সব ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই আবহেই ফেটসুর দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মদ্যপান, ধূমপান বা অন্যান্য মাদক সেবন কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। কেউ যদি এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তা হলে সংগঠন কোনও ভাবেই তাঁদের পাশে দাঁড়াবে না। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোনও রকম নেশা করেন, তা হলে তার দায় কেউ নেবে না।’’
ফেটসুর জারি করা সেই বিবৃতি। ছবি: সংগৃহীত।
একই সঙ্গে ফেটসুর বিবৃতিতে উঠে এসেছে সংগঠনের পদত্যাগী ছাত্রনেতাদের প্রসঙ্গ। ফেটসু বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘সংগঠনের যে সব ছাত্রনেতা সমাজমাধ্যমে সংগঠন থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন, সংগঠন সেই সব নেতার সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক রাখবে না।’’ যদিও ফেটসুর তরফে কোনও ছাত্রনেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ঘটনাচক্রে, যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গে বার বার উঠে এসেছে ‘ফেটসু’র-ই এক প্রাক্তন ছাত্রনেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে ‘আলু’র নাম। অরিত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। পুলিশ তাঁর নাম না করলেও সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, দিনের পর দিন চর্চা চলেছে ‘আলু’কে নিয়ে। তাঁর নীরবতা জল্পনায় আরও ঘি ঢেলেছে। অভিযোগ উঠেছে, সেই রাতে হস্টেলেই ছিলেন অরিত্র এবং তাঁর উপস্থিতিতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। ছাত্রমৃত্যুর পর থেকে তিনি ‘পলাতক’ বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অরিত্র। তাঁর দাবি, তিনি ঘটনার দিন রাতে অর্থাৎ, ৯ অগস্ট হস্টেলে ছিলেন না এবং ১০ অগস্ট তিনি কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, র্যাগিংয়ের ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবে যুক্ত না থাকলেও এই ঘটনায় নিজের ব্যর্থতার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। কারণ, ক্যাম্পাসকে র্যাগিংমুক্ত রাখার নৈতিক এবং রাজনৈতিক দায় তিনি পালন করতে পারেননি। সেই দায় মাথায় নিয়ে ঘটনার পর তিনি ছাত্র সংসদের ‘সভাপতি’ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বলেও অরিত্র জানিয়েছেন। যাদবপুরের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়াদের একাংশের মতে, বিবৃতিতে যে ছাত্রনেতার পদত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আদতে অরিত্র। যদিও এই নিয়ে ‘ফেটসু’র তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। আবার যাদবপুরের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়াদের অন্য আর একটি অংশের মতে, অরিত্রের নাম তদন্তে জড়িয়ে পড়ার পরই তড়িঘড়ি এই বিবৃতি জারি করেছে ছাত্র সংগঠন ফেটসু।