প্রতীকী ছবি।
এ রাজ্যে ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে জরুরি কী, আলোচনাসভার প্রশ্ন ছিল সেটাই। আর্থিক সামর্থ্য, রোগী কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো, না কি সবার আগে জরুরি গ্রহণযোগ্যতা? রবিবার জি ডি বিড়লা সভাঘরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বক্তারা যা বললেন, তাতে সব ক’টিই ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। তাঁদের মতে, কোনও কিছু সে ভাবে আলাদা করা যায় না। তবে ‘ব্যবহারই পরিচয়’, সেটাও মনে রাখা প্রয়োজন।
সভার শুরুতেই আলোচনার বিষয় স্পষ্ট করে দেন এ দিনের সঞ্চালক তথা ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা বাদশা মৈত্র। টাকা, চিকিৎসার গুণমান, প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামোর পরে গ্রহণযোগ্যতার প্রসঙ্গে আসেন সঞ্চালকেরা। সভার মতে, গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চিকিৎসক-রোগীর সুসম্পর্ক।
বক্তার তালিকায় ছিলেন বিশিষ্ট উপস্থাপক চৈতালী দাশগুপ্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব সুদীপা বসু, বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, প্রবীণ ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। মুখ্য বক্তা ছিলেন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসু এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অদিতি লাহিড়ী।
গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে চৈতালীদেবী জানান, চিকিৎসকের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসার হয়েছে শুনলে রোগী এবং তাঁর পরিজনেরা প্রাথমিক ভাবে মানসিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে শহরের একটি বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতাল সম্পর্কে চৈতালীদেবী বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যবহার খুব খারাপ ছিল, বলতে বাধ্য হলাম।’’ সুজয়প্রসাদের কথায়, ‘‘ক্যানসার রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও কাউন্সেলিং জরুরি। তাঁদের মধ্যে সহানুভূতির অভাব আমিও লক্ষ করেছি।’’
গ্রহণযোগ্যতার অন্য দিক প্রসঙ্গে আলোকপাত করে প্রবীণ ক্যানসার চিকিৎসক সুবীরবাবু বলেন, ‘‘চিকিৎসক এবং পরিকাঠামোর পাশাপাশি একটি হাসপাতালে যে চিকিৎসক-দল রোগীকে দেখছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’’ আর চিকিৎসার খরচ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালের খরচ নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। সুবীরবাবুর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে দামি ইঞ্জেকশন বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই অর্থ কারও পকেট থেকে যাচ্ছে না বলে সেখানে ওই সামগ্রীর অপচয় হচ্ছে কি না, তা-ও দেখা উচিত।’’
উল্টো দিকে ক্যানসার চিকিৎসার খরচের কথা মাথায় রেখে প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বলেন, ‘‘রাজনীতি ভুলে সাধারণ মানুষের স্বার্থে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা নেওয়া উচিত। কারণ, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিধি অনেক বেশি।’’
এই আবহে সাধ্যের মধ্যে ক্যানসার চিকিৎসা প্রসঙ্গে সভার মুখ্য বক্তা সুগতবাবুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসায় কী ধরনের বিমা ভাল ভাবে কাজ করবে সে দিকে মন দিতে হবে। এমন বিমা প্রকল্প করতে হবে, যাতে কারও মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ না হয়ে যায়।’’ আর গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে রোগী-চিকিৎসকের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’’