বিপজ্জনক: বাইকচালকের মাথায় হেলমেট থাকলেও তিন খুদে আরোহীর মাথা ফাঁকা। রিপন স্ট্রিট-এজেসি বসু রোড মোড়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
হেলমেট ছাড়া দুই যুবকের স্কুটি আটকে লাইসেন্স দেখে, স্কুটির ছবি তুলে, জরিমানা করার পর ছেড়ে দিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। মিনিট দশেক পরে সেই একই স্কুটি পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেল। তবে এ বার দু’জন নন। তাঁদের পিছনে তত ক্ষণে সওয়ার হয়েছেন আরও এক তরুণী। তিন জনকে হেলমট ছাড়া স্কুটিতে যেতে দেখে সেই পুলিশকর্মীরাই ধরতে গেলে চালকের উত্তর, ‘‘দাদা, একটু আগেই জরিমানা দিয়ে দিয়েছি।’’— শনিবার রাতে নাকা তল্লাশির সময়ে এমনই একটি ছবি ধরা পড়ল যাদবপুর থানা এলাকায়।
ওই রাতেই পার্ক সার্কাস সংলগ্ন একটি শপিং মলের অদূরে পুলিশ বাহিনীকে নাকা তল্লাশি করতে দেখে একের পর এক হেলমেটহীন মোটরবাইক চালককে বাইক ঘুরিয়ে অন্য গলি ধরে পালাতে দেখা গেল। তারই মাঝে যাঁরা পুলিশের সামনে চলে এসেছিলেন, প্রায় সকলেই চেষ্টা করছিলেন নানা অজুহাত দিয়ে বাঁচতে। কেউ বলছেন সামনেই বাড়ি, রাস্তার উল্টো দিকে বন্ধুর বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছেন। কেউ আবার বাইক নিয়ে দোকান থেকে জিনিস কিনতে বেরিয়েছেন বলে জানালেন। তাই সামান্য দূরত্বের জন্য আর হেলমেট নেননি। কেউ কেউ নিজেদের হেলমেট নিলেও মাঝখানে বসে থাকা বাচ্চার হেলমেট নিতে ভুলে গিয়েছেন! যদিও নাকা তল্লাশির হাত থেকে এঁরা কেউ-ই রেহাই পাননি। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর অভিযোগে সকলের থেকে জরিমানা নিয়েছে পুলিশ। কারও থেকে আবার লাইসেন্স না থাকায় মোটরবাইক, স্কুটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শহরের রাত-পথে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক মহিলা ও তাঁর চালককে হেনস্থার পরে নড়ে বসে কলকাতা পুলিশ। হেমলেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের তাণ্ডব রুখতে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার নির্দেশে তার পর থেকেই শহর জুড়ে রাতে শুরু হয়েছে নাকা তল্লাশি। কিন্তু তাতেও যে সাধারণ মানুষের হুঁশ ফেরেনি তা শনিবার শহর ঘুরেই ধরা পড়ল। অন্য দিনের মতো ওই রাতেও ১১টা-১টা পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে নাকা তল্লাশি করছিলেন বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড এবং স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা যৌথ ভাবে।
সেই তল্লাশির সময়ে দেখা গেল, শুধু হেলমেট ছাড়াই নয়, এক একটি মোটরবাইকে এবং স্কুটিতে তিন জন করে আরোহী রয়েছেন। অনেকে আবার ছোট্ট বাচ্চাকে মাঝখানে বসিয়ে হেলমেট ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছেন। এ রকমই এক স্কুটি আরোহীকে আটকাতেই তাঁর যুক্তি, ‘‘স্যর, রাস্তার ওপারে যাব একটা জিনিস কিনতে।’’ পুলিশকর্মীরা নাছোড় হওয়ায় শেষে স্কুটি রেখে মেয়ের হাত ধরে হেঁটে জিনিস কিনে আনলেন ওই ব্যক্তি। এ দিকে, বেশ কয়েক জন হেলমেটহীন আরোহীকে ধরতেই খবর ছড়ায়। দূর থেকে নাকা তল্লাশি চলছে দেখে অথবা আগাম খবর পেয়ে অনেককেই সটান মোটরবাইক ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকে যেতে দেখা গেল।
কয়েক দিন আগে এ ভাবেই সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে এক মোটরবাইক আরোহী পালাতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ধরতে ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী পিছন থেকে মোটরবাইক ধরে আটকাতে গেলে তাঁকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হিঁচড়ে নিয়ে যান ওই চালক। পুলিশকর্মী পড়ে গেলে বাইক নিয়ে পালান সেই চালক। শনিবার বিকেলে সেই ঘটনারই ছায়া দেখা গেল। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ধরা পড়েছেন অভিযুক্ত চালক। ওই বিকেলে মহাত্মা গাঁধী রোড এবং স্ট্র্যান্ড রোডের সংযোগস্থলে বেপরোয়া গতিতে যাওয়া এক মোটরবাইক আরোহীকে ধরতে গেলে হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের এক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং হোমগার্ডকে ধাক্কা মেরে পালান ওই বাইক আরোহী। ঘটনাস্থলে ছিলেন ওই ট্র্যাফিক গার্ডেরই সার্জেন্ট সুকান্ত মুহুরি। পুরো বিষয়টি ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসার ইনচার্জকে জানান তিনি। পরে মোটরবাইকের নম্বর ধরে চালক প্রবেশ যাদবকে (২৫) পুলিশ গ্রেফতার করে। গার্ডেনরিচের বাসিন্দা ওই যুবককে রবিবার আদালতে তোলা হলে দু’দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
শনিবার রাতেও নাকা তল্লাশির সময়ে পার্ক সার্কাস মোড়ের অদূরে শপিং মলের পাশে প্রায় একই ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রেও মোটরবাইকটি গতি বাড়িয়ে পুলিশের নাগাল থেকে পালিয়ে যায়। পরে অন্য একটি স্কুটিকে ধরেন পুলিশকর্মীরা। তাতে সওয়ার তিন জন আরোহীর মাথাতেই হেলমেট ছিল না। পুলিশকর্মীরা তাঁদের আটকালে শুরু হয়ে যায় বাগবিতণ্ডা। স্কুটিটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিন সওয়ারি। পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে গালিগালাজ করেন তাঁদেরই এক জন। তাঁকে পুলিশ আটক করেছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।