ক্ষতিগ্রস্তেরা ঘরছাড়া। ফাইল ছবি
বিপর্যয়ের পরে কেটে গিয়েছে তিন বছর। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে বৌবাজারে ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন দু’বছরের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি হবে। কিন্তু এখনও শুরুই হয়নি কাজ।
২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলার সময়ে বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনের কিছু বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। তখন থেকেই ক্ষতিগ্রস্তেরা ঘরছাড়া। মেট্রোর ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা ভাড়ায় রয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আজ, বুধবার সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনে তাঁদের প্রতীকী অনশন চলবে। বিকেল ৫টায় কালো পোশাকে মোমবাতি মিছিল করবেন তাঁরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাসিন্দারা ‘মেট্রো হিট রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। সংগঠনের সেক্রেটারি সঞ্জয় সেন জানালেন, সেই যে তিনি সেকরাপাড়া লেনের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, আর ফিরতে পারেননি। এখন যদুনাথ দে রোডে ভাড়ায় থাকেন। সঞ্জয় বলেন, “গত দু’বছর মেট্রো কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে ভাল করে কথাও বলেননি। শুধু বাড়ির কাজ শেষের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বার লিখিত প্রতিশ্রুতি চাই। না হলে বুধবার থেকে লাগাতার আন্দোলন চলবে।”
সঞ্জয় বসাক নামে আর এক ক্ষতিগ্রস্ত থাকেন বেলেঘাটার একটি ফ্ল্যাটে। তাঁর ছাপাখানার ব্যবসা ছিল। সঞ্জয় বলেন, “বাড়ি আর ব্যবসা, দুই-ই গিয়েছে। নতুন করে ব্যবসা জমাতে পারিনি। আর্থিক সঙ্কটে রয়েছি।” আর এক ক্ষতিগ্রস্ত আশিস সেন বললেন, “বাড়ি ভাঙার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে বলা হয়, দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে বাড়ি ফিরে পাব। মেট্রো কর্তৃপক্ষও একই প্রতিশ্রতি দেন।” তাঁর দাবি, কী ভাবে তাঁরা বাড়ি ফিরে পাবেন, তা বিস্তারিত জানাতে হবে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। দুর্গা পিতুরি লেনের সোনাক্ষী সরকার এখন থাকেন বেলেঘাটায়। তিনি বলেন, “তিন বছরেও আতঙ্ক কাটেনি। বাড়ি তৈরি হলে ফিরে গিয়েও নিশ্চিন্তে থাকতে পারব তো? নীচ দিয়ে মেট্রো যাবে। ফের অঘটন ঘটবে না তো?”
তাঁরা জানাচ্ছেন, বাড়িছাড়াদের মধ্যে গত তিন বছরে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশিস বললেন, “ওঁরা সবাই হয়তো বয়স হওয়ায় মারা গিয়েছেন। কিন্তু সকলকেই বাড়ির চিন্তা কুরে কুরে খেত। তাঁদের বুধবার স্মরণ করা হবে।”
মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজ শেষ হলেই বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, ২০২৪-এর ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হবে।