মমতা-শুভেন্দু মুখোমুখি হবেন কি? — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার বিরোধী দলনেতার মুখোমুখি বৈঠকের কথা আছে। কিন্তু কথা থাকলেও শুভেন্দু কথা রাখবেন কি? এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতেই। বুধবার বাজেট অধিবেশনের আগে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগের বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্য সরকারের ডাকা ওই বৈঠকে নিয়মানুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং পরিষদীয় মন্ত্রীকে থাকতে হয়। নাম চূড়ান্ত হয় তার পরেই। মমতা, শুভেন্দু ছাড়া তাই ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরও। মমতা, শোভনদেব থাকছেন। কিন্তু শুভেন্দু থাকবেন কি?
এই পদের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ১৫ জন প্রাক্তন আমলা ও পুলিশ কর্তা। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের নাম ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে রাজ্য সরকার। ওই ১১ জনের মধ্যে থেকে এক জনের নাম রাজ্যের মুখ্য তথ্য কমিশনার হিসাবে চূড়ান্ত করা হবে। সেই কারণেই বুধবারের বৈঠক।
রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা, আদৌ কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি কোনও বৈঠকে বসবেন বিরোধী দলনেতা? কারণ, গত পৌনে দু’বছরে একাধিক বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও নানা কারণ দেখিয়ে তা এড়িয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিধানসভায় রাজ্যের লোকায়ুক্ত বাছতে মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে না গিয়ে লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু। পরে ২০২২ সালের ২৩ মে রাজ্যের লোকায়ুক্ত তথা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ঠিক করতেও রাজ্য সরকার বিরোধী দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেই বৈঠক হয়েছিল নবান্নে। একেবার শেষ মুহূর্তে নবান্নের বৈঠকে যোগ না দিয়ে টুইট করেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম বিধায়ক। বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী লোকায়ুক্ত ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করে দেন।
আবার গত নভেম্বরের ২৩ তারিখে রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রাজভবন যাওয়ার পথেই বিরোধী দলনেতা জানতে পারেন, তাঁর বসার আসন দেওয়া হয়েছে পিছনের সারিতে। সেখানে শুভেন্দুর বসার ব্যবস্থা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে। এটা জানার পরেই রাজভবন থেকে নিজের কনভয়ের মুখ ঘুরিয়ে নেন তিনি। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিতে চলে যান শুভেন্দু। পরে না যাওয়ার কারণ সবিস্তারে টুইট করেছিলেন। একই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে আসন বণ্টনের ছবিও দিয়েছিলেন শুভেন্দু।
গত ২৬ জানুয়ারি রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানেও রাজভবনে আমন্ত্রিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত ছিল। কিন্তু রাজভবনের আমন্ত্রণ এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে অনুষ্ঠানে না যাওয়ার কারণও ক্ষোভের সুরে জানিয়েছিলেন তিনি। একেবারে শেষ বেলায় সেই কারণ জানানো টুইট করেন শুভেন্দু।
বুধবারের বৈঠকের পরে এই চারটি নজিরের কথাই মনে পড়ছে রাজনৈতিক মহলের। বিজেপি শুভেন্দুকে শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা ঘোষণা করার পর থেকে কোনও বৈঠকে মুখোমুখি হননি মমতা-শুভেন্দু। বুধবার যদি তাঁরা মুখোমুখি হন, তা হলে তা হবে বাংলার রাজনীতিতে এক নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন।
তবে বিধানসভার ভিতরে অনেক বারই মুখোমুখি হয়েছেন মমতা ও শুভেন্দু। সেই ছবি দেখা গিয়েছে সোমবারও। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর একটু অন্য রকম ছবি দেখা গিয়েছিল। শীতকালীন অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতাকে। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর ঘরে যান শুভেন্দু। কিন্তু একা নন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তিন বিধায়ক অশোক লাহিড়ি, মনোজ টিগ্গা ও অগ্নিমিত্রা পালকে।