Hari Krishna Dwivedi

রাজ্যের অর্থমন্ত্রিত্বের জন্য অন্যতম শীর্ষ আমলার দিকে নজর, তিনি কি রাজি হবেন? চর্চা প্রশাসনে

মানিকতলা আসনটির জন্য তৃণমূলের অন্দরে যে দাবিদার নেই তা নয়। তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা ছিল, প্রয়াত সাধনের কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে বা সাধনের স্ত্রীকে ওই আসনে টিকিট দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৮
Share:

এখন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র দফতর রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রয়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্যের অর্থ দফতর সফল ভাবে সামলানোর জন্য অন্যতম শীর্ষ আমলাকে একটি উপনির্বাচনে শাসকদলের টিকিটে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এবং শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

Advertisement

ভোটে জেতার পর তাঁকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র দফতরের কাজও তিনি খানিকটা সামলে দিতে পারবেন। এখন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র দফতর রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তার পাশাপাশিই আরও একাধিক দফতর রয়েছে।

Advertisement

আমলার নাম হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি এখন রাজ্যের মুখ্যসচিব। যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ বলেই প্রশাসনের অন্দরে পরিচিত। — ফাইল চিত্র।

আমলার নাম হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি এখন রাজ্যের মুখ্যসচিব। যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ বলেই প্রশাসনের অন্দরে পরিচিত। মুখ্যসচিব পদে আসার আগে হরিকৃষ্ণ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন। তারও আগে তিনি ছিলেন রাজ্যের অর্থসচিব। টানা ন’বছর তিনি ওই পদে কাজ করেছেন। আর স্বরাষ্ট্রসচিব পদে কাজ করেছেন প্রায় এক বছর। দু’টি পদেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে কাজ করেছেন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ করেন। বস্তুত, অর্থসচিব হিসেবে বাম আমলেও হরিকৃষ্ণ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। ‘পাবলিক ফিনান্স’ নিয়ে তাঁর কাজ বাম এবং অবাম— দুই আমলেই প্রশংসিত হয়েছে।

আগামী জুন মাসে হরিকৃষ্ণের সরকারি চাকরির মেয়াদ ফুরোচ্ছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার পরেই তাঁকে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড় করানো হবে। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে আসনটি ফাঁকা হয়েছে। কিন্তু এখনও সেখানে উপনির্বাচন ঘোষণা করা হয়নি। বস্তুত, আসনটি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা চলছে। অসমর্থিত প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই মামলাটি নিয়ে খানিক ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, জুন মাসে হরিকৃষ্ণের অবসর পর্যন্ত ওই নীতি নিয়েই চলতে চায় রাজ্য। তারা চাইছে, হরিকৃষ্ণের অবসরের কাছাকাছি সময়ে মানিকতলার উপনির্বাচন নিয়ে আদালতে মামলার ফয়সালা হোক। যাতে মানিকতলা নিয়ে নির্দিষ্ট রায় বেরোনোর পর নির্বাচন কমিশন সেখানে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করে এবং পরিকল্পনা মতো হরিকৃষ্ণকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া যায়। জুন মাসের আগে মানিকতলায় উপনির্বাচন হলে হরিকৃষ্ণ তখনও সরকারি আমলা থাকবেন।

তবে বিষয়টি এখনও একেবারেই পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। হরিকৃষ্ণ নিজে ওই দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন কি না বা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত তাঁর নামেই সিলমোহর দেয় কি না, সেটিও দেখার। তবে বর্তমান মুখ্যসচিবের নাম মানিকতলার ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ হিসেবে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে জোরালো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের প্রশ্ন করলে তাঁরাও বিষয়টি এড়িয়েই গিয়েছেন। যেমন এক নেতা বলেছেন, ‘‘এ তো রাম না জন্মাতেই রামায়ণ লেখা! মানিকতলার ভোট কবে হবে, তারই কোনও ঠিক নেই! এখন থেকেই কে আমাদের প্রার্থী, তা নিয়ে আলোচনা করে কী লাভ? দলনেত্রী যাঁকে প্রার্থী করবেন, তিনিই লড়বেন। আমরা দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে তাঁকে জেতানোর চেষ্টা করব।’’

ঘটনাচক্রে, মানিকতলা আসনটির জন্য তৃণমূলের অন্দরে যে দাবিদার নেই তা নয়। তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা ছিল, প্রয়াত সাধনের কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে বা সাধনের স্ত্রীকে ওই আসনে টিকিট দেওয়া হবে। শ্রেয়া নিজে উদ্যোগী হয়ে মানিকতলা কেন্দ্রের কাজ দেখাশোনা করতেও শুরু করেছেন। অর্থাৎ, পাণ্ডে পরিবারের কোনও এক জন সদস্যকে মানিকতলার টিকিট দেওয়া হবে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন দেখার, রাজনৈতিক পরিবারের কোনও সদস্যের পরিবর্তে মানিকতলায় শীর্ষ আমলাকে বেছে নেয় কি না শাসক শিবির। তেমন হলে অর্থ দফতর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারবেন বলে রাজ্য প্রশাসনেরও একাংশের ধারণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement