বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের প্রধান সচিবের পদ থেকে আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরানো নিয়ে জল্পনা চলছেই রাজ্য-রাজনীতিতে। তার আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, লোকায়ুক্ত নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিবৃতিও জারি করেছেন। রাজ্যের সঙ্গে আনন্দের এ হেন ‘সমীকরণ’ বদলের মধ্যেই সোমবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাজ্যপালের প্রসঙ্গ টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে নিশানা করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বলছে, রাজ্যপালকে নাকি গ্রিপে (নিয়ন্ত্রণে আনা) এনেছে!’’
রাজ্যপাল পদে শপথগ্রহণের পর থেকেই আনন্দের সঙ্গে মমতার সরকারের ‘মিষ্টি সম্পর্ক’ দেখেছেন রাজ্যবাসী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে রাজ্যপালের কণ্ঠে। অন্য দিকে, রাজ্যপাল সম্পর্কে মমতাও বলেছেন, ‘‘উনি ভদ্র, ভাল মানুষ।’’ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণেও সেই ‘সুসম্পর্কে’র ছাপ দেখা গিয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের এমন ‘মধুর সম্পর্ক’ একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি রাজ্য বিজেপির নেতারা। এ নিয়ে প্রকাশ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন শুভেন্দু-সহ বিজেপির অন্য নেতারা।
গত শনিবার সকালে রাজভবনে আনন্দের সঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বৈঠকের পর বদলাতে থাকে ছবি। ওই বৈঠকের আধ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ডেকে কথা বলেন রাজ্যপাল। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের পরে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে নবান্ন, মন্ত্রীর কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে লোকাযুক্ত নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যপাল বিবৃতি জারি করেন। কড়া ভাষায় জানিয়েছিলেন, সব কিছুর উপরেই ‘নজর’ রয়েছে তাঁর। রাজ্যপালের এ হেন ‘বদলে’র পরই শনিবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের সভা শেষে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, তিনি (রাজ্যপাল) ট্র্যাকে আসতে শুরু করেছেন।’’
সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপালের জবাবি ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাষণের শুরু থেকেই শুভেন্দুকে নিশানা করেন মমতা। সেই সময় রাজ্যপাল প্রসঙ্গে শুভেন্দুর ওই মন্তব্যের সূত্র ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলছে, রাজ্যপালকে নাকি গ্রিপে এনেছেন! উনি কি রাজ্যপালের উপেদেষ্টা?’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের আগের রাতেই রাজ্যপালের প্রধান সচিব পদ থেকে নন্দিনীকে সরানোর সুপারিশ নবান্নে পাঠিয়েছে রাজভবন। নন্দিনী রাজভবনে ‘শাসকদলের দূত’ হিসাবে কাজ করতেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। ফলে এই আবহে বিধানসভায় শুভেন্দুকে বিঁধতে গিয়ে মমতার মন্তব্য আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
মমতার ভাষণের আগে সোমবার বিধানসভায় বক্তৃতা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের ভাষণের সঙ্গে একমত নই। ওই ভাষণে অসত্য তথ্য ছিল... রাজভবন থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তাতে রাজ্যপালের মনের ভাব প্রকাশ পেয়েছে এবং তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বিজেপির তরফে যে যে বিষয় তুলেছিলাম, তাতে তিনি সম্মত। লোকায়ুক্তকে অনুমোদন দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বদল নিয়ে বিলে অনুমোদন দেবেন না বলে জানিয়েছেন।’’ পরে এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যপালের অফিস কখনই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের মতো হওয়া উচিত নয়। রাজ্যপালকে ভুল পথে পরিচালনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালের প্রধান সচিব, মুখ্যসচিব। আমরা মনে করি, গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীপ ধনখড়ের দেখানো পথে চলা উচিত রাজ্যপালের।’’