উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ছবি: টুইটার।
শনিবার থেকে ক্রমেই বদলাচ্ছেন সিভি আনন্দ বোস। একের পর এক পদক্ষেপের মধ্যেই রবিবার চলে যান দিল্লিতে। জানা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকই তাঁর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সন্ধ্যায় জানা গেল, রাজভবনে তাঁর পূর্বসূরী তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। সেই খবর ছবি সহ সামনে এনেছেন স্বয়ং ধনখড়।
এই রাজ্যে রাজভবনের ভূমিকা দেখিয়ে নজির তৈরি করেছিলেন ধনখড়। তিনি উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে রাজ্য বিজেপির চাওয়া ছিল নতুন রাজ্যপালও যেন ধনখড়ের মতোই সক্রিয় হন। কিন্তু কয়েকটা দিন কাটতে না কাটতেই হতাশ হয় রাজ্যের গেরুয়া শিবির। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিজেপি। আনন্দ নিয়ে বিজেপির নিরানন্দে থাকাটা কিছুটা হলেও কমেছে গত শনিবারের পরে। কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে বুঝিয়েছেন তিনি বদলাচ্ছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ধনখড় হতে পারবেন কি! এমন প্রশ্ন রয়েই গিয়েছিল। সেই প্রশ্ন নিয়ে জল্পনার আবহে প্রথম দিল্লি সফরে ধনখড়ের সঙ্গে কেন সাক্ষাৎ আনন্দের। এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, হয়তো বাংলায় রাজভবনের ভূমিকা সম্পর্কে ‘পাঠ’ নিতেই গিয়েছেন তিনি। যা তাঁকে ‘ধনখড় টু’ হয়ে উঠতে সাহায্য করলেও করতে পারে।
শনিবার সকালে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ঘণ্টা দু’য়েক বৈঠক হয়। এর পর থেকেই বদলাতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। কিন্তু বৈঠক শেষের আধ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপাল রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ডেকে কথা বলেছেন (যা সেদিনই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন)। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের পরে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে নবান্ন, মন্ত্রীর কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ। এত দিন রাজ্যের নিন্দা তাঁর মুখে শোনাই যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছে দরাজ গলায়। নানা আচরণে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য দেখেছে বিজেপি। কিন্তু সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে লোকাযুক্ত নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যপাল বিবৃতি জারি করেন। কড়া ভাষায় জানিয়েছিলেন, সবকিছুর উপরেই ‘নজর’ রয়েছে তাঁর। তার আগেই রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ডেকে কথা বলেছেন।
কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের পরে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে নবান্ন, মন্ত্রীর কাছে তা জানতে চান রাজ্যপাল আনন্দ। এর পর রবিবার রাতে জানা যায়, তাঁর প্রধান সচিব পদে থাকা আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ নবান্নে পাঠিয়ে দিয়েছেন আনন্দ। তখনই জানা যায় দিল্লিতে সোমবার শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হতে পারে। কিন্তু সেটা যে ধনখড়ের সঙ্গে হবে তেমনটা আন্দাজ করা যায়নি। এখন রাজ্য বিজেপি তো বটেই শাসক দল তৃণমূলকেও অপেক্ষা করে থাকতে হবে এটা দেখার জন্য যে, উপরাষ্ট্রপতি ভবন থেকে কী শিখে এলেন আনন্দ!