শুধু সুকন্যার নামেই ১২০ কাঠা জমি! খবর ইডি সূত্রে। ফাইল চিত্র।
চাকরিতে প্রভাব খাটানো থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, নানা অভিযোগ অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। গরু পাচার মামলায় সেই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের পরেই বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে তাঁকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির অভিযোগ, সুকন্যা তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন। ইডি সূত্রে খবর, সুকন্যার নামে ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। এর পাশাপাশি, ওই সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, অনুব্রতের নামে বোলপুরে ২৪০ কাঠা জমি রয়েছে। আর তাঁর কন্যা সুকন্যার নামে রয়েছে ১২০ কাঠা জমি! বোলপুর পুর এলাকার মধ্যেই এই বিপুল পরিমাণ জমি আছে বলে ইডি সূত্রে খবর। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, এই জমির আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
আগেই বীরভূমের বোলপুরে অনুব্রতের নামে ২৪০ কাঠা জমির কাগজ প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বার সুকন্যার নামে ১২০ কাঠা জমি সংক্রান্ত সরকারি নথিও প্রকাশ্যে আনতে চলেছে ইডি।
বোলপুর পুর এলাকায় প্রত্যেক কাঠা জমির আনুমানিক দাম অন্তত ৭ লক্ষ টাকা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনুব্রতের ২৪০ কাঠা ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার ১২০ কাঠা জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। আর এই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তিই এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে। বৃহস্পতিবার সুকন্যাকে আদালতে পেশ করার সময় ইডি এই নথিও প্রকাশ্যে আনতে পারে। ইডি সূত্রের খবর, গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ করতেই এই জমিগুলি কেনা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশির ভাগ জমিই ফাঁকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, অবৈধ উপায়ে পাওয়া টাকা বিনিয়োগ করার জন্যই জমিগুলি কেনা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রের খবর, ১২০ কাঠা জমির বাইরে শিবশম্ভু রাইস মিলেও রয়েছে অনুব্রত-কন্যার জমি।
তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই মনে করছিলেন যে, অনুব্রত, তাঁর কন্যা সুকন্যা এবং তাঁর স্ত্রীর নামে যা সম্পত্তি রয়েছে, তার থেকেও অনেক বেশি পরিমাণ সম্পত্তি বেনামে কেনা হয়েছে। বেনামে অনুব্রতেরা আরও জমি কিনেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নথি বলছে, এই সমস্ত জমি কেনা হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। এমনকি ২০১৪ সালে একই দিনে ৭টি জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে সুকন্যার নামে।
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল ১৬ কোটি টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজ়িট রয়েছে সুকন্যার নামে। সুকন্যার চাকরি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বার বার। সরকারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি করতেন সুকন্যা। অভিযোগ, শাসকদলের নেতা হিসাবে অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে মেয়ের এই সরকারি চাকরি পাকা করেছেন। কী ভাবে কোন পরীক্ষা দিয়ে সুকন্যা প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এ-ও অভিযোগ উঠেছিল, সুকন্যা নাকি স্কুলে না গিয়েই দিনের পর দিন বেতন নিয়েছেন।
অনুব্রত-কন্যার বয়স কম। খুব বেশি দিন তিনি চাকরি করেননি। স্বল্প সময়ে এত সম্পত্তির মালিকানা তিনি কী ভাবে পেলেন, কী ভাবেই বা এত টাকা তিনি সঞ্চয় করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। হিসাব বহির্ভূত এই সম্পত্তি প্রথম থেকেই ইডির নজরে ছিল। অভিযোগ, গরু পাচারকাণ্ডের সঙ্গে এই সম্পত্তির যোগ থাকতে পারে। তাই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিক বার সুকন্যাকে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। এর আগে তিন বার তলব এড়িয়েছিলেন তিনি।