প্রতীকা ছবি
ফেসবুকে বাংলা ছবির এক নামী প্রযোজক-পরিচালকের ভুয়ো ‘প্রোফাইল’ খুলেছিল সে। তার মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমাত। তারপরে তাঁদের সিনেমায় সুযোগ করে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করা হল।
শুক্রবার রাতে হুগলির চুঁচুড়া থানা এবং চন্দননগর কমিশনারেটের সাইবার সেলের অফিসাররা সুভাষ দাস নামে বছর পঁচিশের ওই যুবককে ধরেন। তার কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা, বেশ কয়েকটি মোবাইলের সিমকার্ড এবং দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গত ৫ মার্চ কলকাতার মধ্যমগ্রামের দোলতলার বাসিন্দা অর্পিতা দাস চুঁচুড়ায় এসে প্রতারিত হন। তিনি মেয়েকে সিনেমায় নামাতে চেয়েছিলেন। তাই ওই ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইলে ভরসা করে ফোনে কথাবার্তা বলে ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে চুঁচুড়ায় আসেন। প্রতারিত হয়েছেন বুঝে সে দিনই তিনি চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগের তদন্তে নেমেই সুভাষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু অর্পিতাই নন, তার আগে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরের বাসিন্দা সুইটিমনা বিশ্বাসের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েও সুভাষ প্রতারণা করে বলে অভিযোগ। জেরায় ধৃত অপরাধের কথা কবুল করেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাবে মানুষ নানা ভাবে প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। খ্যাতনামা প্রযোজক-পরিচালকের নাম ভাঁড়িয়ে প্রতারণার এ এক নতুন পদ্ধতি। ধৃতকে জেরা করে ওই চক্রে আরও কারা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ধৃতকে শনিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালতে যাওয়ার পথে সুভাষ বলে, ‘‘সৎ ভাবে উপার্জন খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই ওই পথ নিয়েছিলাম। পরিশ্রমও কম। মাসদেড়েক আগে ফেসবুকে প্রোফাইলটা খুলেছিলাম।’’ এ দিন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট দফতরে এসে সুভাষকে শনাক্ত করেন অর্পিতা। তিনি বলেন, ‘‘খুব শিক্ষা হয়েছে আমার। এমন ভাবে আর কেউ যেন প্রতারিত না হন। টাকাটা পেলে বাঁচি। পুলিশের উপরে আস্থা রয়েছে।’’
গত ৫ মার্চ পুলিশের কাছে অভিযোগে অর্পিতা জানিয়েছিলেন, মেয়েকে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম চাওয়া হয়েছিল। স্থির হয় ৫ মার্চ চুঁচুড়া পুলিশ লাইনের উল্টো দিকে জেলা আদালত চত্বরে ওই টাকা একজনের হাতে তুলে দিতে হবে। যে টাকা নিতে এসেছিল, সেই সুভাষই যে প্রতারক তখন বুঝতে পারেননি অর্পিতা। আগে তাঁকে ফোনে জানানো হয়েছিল, যে টাকা নেবে, সে চন্দননগর কমিশনারেটে কর্মরত। নাম ‘সুমন’। সেই মতো অর্পিতা সে দিন দুপুরে সেখানে টাকা নিয়ে পৌঁছে যান। কিছুক্ষণ পরে সুভাষ এসে অর্পিতাকে ওই ভুয়ো প্রযোজকের নাম বলে টাকা নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। মেয়ে কবে শ্যুটিংয়ে যাবে এ প্রশ্নও করেছিলেন অর্পিতা। কিন্তু সুভাষ কাজের অছিলায় ছিলায় চম্পট দেয়। প্রতারণায় সুবিধার জন্য সুভাষ ভুয়ো পুলিশ পরিচয়ও ব্যবহার করত বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।