প্রতীকী চিত্র।
মহিলাদের উপরে কোনও ধরনের নিগ্রহ, নির্যাতন বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেলায় পরিস্থিতি কী? পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় সন্তুষ্ট মানুষ? মহিলাদের উপরে ঘটা নানা অন্যায়ের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তৈরি হয়েছিল মহিলা থানা। তারাই বা কতটা পদক্ষেপ করছে? আজ হুগলির খোঁজ নিল আনন্দবাজার
প্রায় ১৩ বছর আগের কথা।
স্ত্রীকে লম্বা করতে কার্নিস ধরে ঘণ্টাখানেক ঝুলে থাকতে বাধ্য করা হত বলে অভিযোগ উঠেছিল গোঘাটে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। তা ছাড়াও, জোর করে লম্বা হওয়ার ওষুধ খাওয়ানো, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ দেওয়া— এ সব অভিযোগও ছিল। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ২০১৪ সালে মামলা থেকে অভিযুক্তদের নিষ্কৃতি দেন বিচারক।
ইদানীং এমন অভিযোগ হুগলিতে বিশেষ শোনা যায় না। ১৩ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। জেলায় তিনটি মহিলা থানা (চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ) তৈরি হয়েছে। নারী নির্যাতনের অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থাও নিচ্ছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে যথাসময়ে তা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
মহিলারা গার্হস্থ্য বা পারিবারিক হিংসার শিকার হলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হলে বা রাজনৈতিক কারণে তাঁদের নিশানা করা হলে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগও শোনা যায়। পুলিশের একাংশ অবশ্য মনে করছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে যে স্থানীয় বাধ্যবাধকতা ছিল, তা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর আর গুরুত্ব দেওয়ার দরকার হবে না।
অনেকে মনে করেন, গত কয়েক বছরে নারী নিগ্রহের ঘটনায় এই জেলায় পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে বিভিন্ন মহিলা কমিশন এবং মানবাধিকার কমিশনের ঠেলায়।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে আরামবাগ মহিলা থানায় ৫০টি মামলা হয়েছে। গত বছর মামলা ছিল ৭৬টি। অপহরণের অভিযোগ বাদ দিয়ে মহিলা থানা-সহ মহকুমার পাঁচটি থানায় ২০২০ সালে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের মামলা হয় ২৩৪টি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ১৩৬টি। চলতি বছরে চুঁচুড়া এবং শ্রীরামপুর মহিলা থানায় ৪০টির বেশি মামলা হয়েছে। গত বছর ওই দুই থানায় অভিযোগের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৭ এবং ৫১টি।
অবশ্য এই পরিসংখ্যান থেকে প্রকৃত চিত্র যে মেলে না, তা মানছে পুলিশ মহলই। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগের বহু ক্ষেত্রেই মহিলারা সংসার করার জন্য সমঝোতার আগ্রহ প্রকাশ করেন পুলিশের কাছে। স্থানীয় ভাবে মিটমাট হয়, কিংবা সামাজিক সম্মানহানির কথা ভেবে তাঁরা থানামুখো হন না।
দোষীর শাস্তির দাবির পাশাপাশি নির্যাতিতার মানসিক ক্ষত নিরাময়ের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, পোলবায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া এক কিশোরী মারা যায়। অভিযোগ, পড়তে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী এক যুবক (পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যের ছেলে) তাকে ধর্ষণ করে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তার পরেও মেয়েটি গায়ে আগুন দেয়। জবানবন্দিতে মেয়েটি জানায়, লোকলজ্জার ভয়েই সে গায়ে আগুন দেয়।
নারী আন্দোলনের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, একটি মেয়ে ধর্ষিত হলে সমাজের একাংশের আচরণে মনে হয়, দোষ তারই। শারীরিক আঘাতের থেকেও মানসিক ভাবে সে বেশি আহত হয়। এমন অত্যাচারে সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন।