মহিলাদের উপরে কোনও ধরনের নিগ্রহ, নির্যাতন তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেলায় জেলায় পরিস্থিতি কী? পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় কতটা সন্তুুষ্ট মানুষ? মহিলাদের উপরে ঘটা নানা অন্যায়ের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তৈরি হয়েছিল মহিলা থানা। তারাই বা কতটা পদক্ষেপ করছে? আজ হাওড়ার খোঁজ নিল আনন্দবাজার
Gender Violence

Crimes against woman: মামলার ভয়ে দায়ের হচ্ছে না অভিযোগই

উলুবেড়িয়ার এক মহিলা চিকিৎসকও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২১ ০৭:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘটনা এক: ছেলে-বৌমার হাতে অত্যাচারিত হয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন মহিলা। প্রতিবেশী যুবক তাঁকে একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়। মহিলার অভিযোগ, আশ্রয় দেওয়ার নাম করে তাঁকে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে যুবকটি। ঘটনাটি বাউড়িয়ার খাজুরি সর্দারপাড়ার। ওই মহিলার অভিযোগ, ‘‘বাউড়িয়া থানায় অভিযোগের পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। ঘটনার তদন্তই শুরু করেনি পুলিশ।’’ বাউড়িয়া থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ করার পর থেকেই ওই মহিলা নিখোঁজ। মহিলাকে খুঁজে পেলেই মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হবে।

Advertisement

ঘটনা দুই: সম্প্রতি শ্যামপুরের আটান্ন গেটে এক নাবালিকা অপহৃত হয়। তাকে পুলিশ উদ্ধার করে আনে। অভিভাবকরা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ ওই নাবালিকাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়ার পথে পুলিশ কনস্টেবল তাঁদের বলেন, ‘‘মামলা চালু হয়ে গেলে কিন্তু নাবালিকাটিকে হোমে থাকতে হবে। ভেবে দেখ, ডাক্তারি পরীক্ষা করাবে কি না।’’ এরপরই নাবালিকাটির পরিবার মামলা তুলে নেয়। তাঁদের অভিযোগ, পাচারকারীরা গ্রামে বহাল তবিয়তে ঘুরছে। আর নাবালিকাটি ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছে না।

ঘটনা তিন: বছর এগারোর এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বাগনানের এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই নাবালিকাকে পুলিশ বলে, ‘‘ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে যাস না।
খুব যন্ত্রণা হবে।’’ এরপরই নাবালিকাটি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে বেঁকে বসে। তবে তার পরিবার কড়া পদক্ষেপ নেয়। থানায় অভিযোগ দায়ের হয় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি গ্রেফতার হন। ডাক্তারি পরীক্ষা না হলেও বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয় নাবালিকাটি। সেই মামলা উলুবেড়িয়ার পকসো আদালতে চলছে।

Advertisement

উপরের তিনটি ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুখ্যমন্ত্রী যখন নারী নির্যাতনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কড়া বার্তা দিচ্ছেন, তখন হাওড়া গ্রামীণের বিভিন্ন থানার অবস্থা এমনই।

উলুবেড়িয়ার এক মহিলা চিকিৎসকও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘‘উলুবেড়িয়া মহিলা থানায় আমি স্বামীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে গিয়েছিলাম। তিন দিন ঘোরানোর পরে আমার অভিযোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপরে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও পুলিশ আমার স্বামীকে গ্রেফতার করেনি।’’ শেষ পর্যন্ত আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন ওই চিকিৎসক। এ বিষয়ে উলুবেড়িয়া মহিলা থানার জবাব, অভিযুক্তকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একাধিক থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে নারী ন‌িগ্রহ ও নারী নির্যাতনের তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। গ্রামীণ এলাকায় নাবালিকাদের অপহরণ করে বিয়ে বা তাকে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগও উঠছে অনেক। বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলাই দায়ের হচ্ছে না। এক্ষেত্রেও পুলিশের দিকেই উঠছে অভিযোগের আঙুল।

আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, নাবালিকা অপহরণের ক্ষেত্রে পুলিশের আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে নাবালিকা নিখোঁজের মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাদের উদ্ধার করতেই তৎপর হয় না। তদন্ত তো পরের কথা।’’ আরও এক আইনজীবী জানান, মহিলা থানায় দক্ষ অফিসার রাখা প্রয়োজন। জেলার একমাত্র মহিলা থানা উলুবেড়িয়ায় তেমন দক্ষ অফিসার নেই বলেই
তাঁর অভিযোগ।

অন্য এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘অপহৃত কোনও নাবালিকা মামলায় জড়িয়ে পড়া মানেই তার স্থান হোমে নয়। চাইলে সে পরিবারের সাথেও থাকতে পারে। এটা সবাইকে বোঝানো দরকার।’’ আইনজীবীদের একাংশের খেদ, পুলিশ যে নির্যাতিতাদের পাশে আছে, সেই আস্থা তারা তৈরি করতে পারেনি। তার ফলেই অনেক নাবালিকার পরিবার মামলার পথে যেতে চান না।

গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য সব অভিযোগ খারিজ করে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে, এই অজুহাত দিয়ে অধিকাংশ নাবালিকার পরিবার নিজেরাই মামলা করতে চান না। নারী নিগ্রহের প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। মামলাও দায়ের করা হয়। হাওড়ায় সেই কারণেই প্রতি বছর পকসো ও বধূ নির্যাতনের মামলা বাড়ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement