মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের ধীবরদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগে মুখর হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালাবদলের পরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ‘অশান্তির’ আবহে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যে তরজা চলছে, তাতেও মমতার এই অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
হলদিয়ার কাছে রবিবার আন্তর্জাতিক জল-সীমান্তে ভারত এবং বাংলাদেশের বন্দি ধীবরদের প্রত্যর্পণ ঘটেছিল। বাড়িতে ফেরা এই রাজ্যের ধীবরদের স্বাগত জানাতে সোমবার দুপুরে গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন মমতা। সকালে ওই ধীবরদের গঙ্গাসাগরে নিয়ে আসা হয়েছিল। গত বছর অক্টোবরে ধরা পড়ার সময়ে ট্রলার থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যু হয় এই রাজ্যের এক ধীবরের। তাঁর স্ত্রীকে দু’লক্ষ টাকা সাহায্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাকদ্বীপ-সহ এই রাজ্যের নানা এলাকার মুক্ত হওয়া ৯৫ জন ধীবরকেও দশ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। এর পরেই মমতার অভিযোগ, “চোখে জল এসে যাওয়ার মতো ঘটনা। কয়েক জন খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। ওঁদের জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? ওঁরা বলতে চাননি। জানতে পারলাম যে, তাঁদের কয়েক জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে দু’হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাঁদের মোটা লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। ফলে, কয়েক জনের কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট। জামাকাপড় পরে ছিলেন বলে বোঝা যাচ্ছিল না।” ‘প্রহৃত’ ধীবরদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছেন মমতা।
মমতার সুরে একই অভিযোগ করেছেন বাড়িতে ফেরা রাজ্যের ধীবরেরাও। পাঁচু দাস, সুকুমার দাস নামে দু’জন ধীবরের অভিযোগ, সীমান্ত লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে পৌঁছনোর পরে সেখানকার উপকূলরক্ষা বাহিনী তাঁদের মারধর করে। তবে সেখানকার জেলে তাঁদের উপরে অত্যাচার হয়নি।
এই সূত্রেই বাংলাদেশের যে ধীবরেরা ভারতে আটকে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে রাজ্যের ব্যবহারের তুলনা টেনেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের একটি ট্রলার সীমানা অতিক্রম করে এই দেশে চলে এসেছিল। সেখানকার ধীবরেরা অসুস্থ ছিলেন জানিয়ে মমতার দাবি, “আমরা ওঁদের ভাল করে চিকিৎসা করাই। সুস্থ করি। খুব যত্নে রেখেছিলাম, যাতে দেশ ও বাংলার বদনাম না হয়। আমরা পুরো সাহায্য করেছি।” দু’দেশ ‘মৈত্রীর বন্ধনেই’ আবদ্ধ থাক, তা-ও তিনি চাইবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশ, বিএসএফ-সহ একাধিক বিষয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাত দেখা দিয়েছে। মমতার এই অভিযোগের পরে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, “এই ধরনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। দুই দেশের ধীবরেরাই দু’দেশের জল-সীমান্তে ধরা পড়েন।”
মমতা এ দিন তাঁদের সরকার ধীবরদের জন্য যে বিশেষ পরিচয়পত্র দিয়েছে, সে কথা স্মরণ করান। ধীবরদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “অনেক সময়ে পথ না বুঝতে পেরে ঝড়ে পথ হারিয়ে যায়, সীমান্ত পেরিয়ে যান। আপনারা আমাদের সীমান্তের বাইরে যাবেন না। তাতে মাছ-উঠলে উঠবে, না-উঠলে না উঠবে। জীবন বেঁচে থাকলে অনেক মাছ পাবেন!”