চিনাগর গ্রামের বাসিন্দাদের মোবাইলেই এমন ‘ভুতুড়ে’ মেসেজই আসছে। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টই নেই। অথচ প্রায় প্রতি দিনই লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের মেসেজ ঢুকছে মোবাইলে। মাসখানেক ধরেই এমন ঘটছে হুগলির ধনেখালি থানার চিনাগর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের কেউ দিনমজুর, কেউ বা অন্যের জমিতে কাজ করেন। অনেকে আবার জমিহীন। তবে তাঁদের প্রত্যেকের মোবাইলেই ওই ‘ভুতুড়ে’ মেসেজ আসছে। তার পর আপনাআপনিই সেই বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেওয়ার মেসেজও পাচ্ছেন তাঁরা। গোটা ঘটনায় চক্ষু চড়কগাছ ওই বাসিন্দাদের। কোনও ব্যাঙ্ক জালিয়াতি চক্রের বা জঙ্গিগোষ্ঠীর শিকার কি না, তা ভেবে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের। এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
ধনেখালি থানার ভান্ডারহাটি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাগর গ্রামের ১-০১২ জন বাসিন্দার দাবি, মাসখানেক আগে তাঁদের বাড়িতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের চেক বই আসে। তার দু’দিন পর তাঁদের মোবাইলে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের মেসেজ আসতে থাকে। টাকার পরিমাণ দেখে চক্ষু চড়কগাছ তাঁদের। অথচ মদনমোহনতলা এলাকার ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কে শাখায় কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেননি তাঁরা। কোনও পাশ বইও তাঁদের কাছে আসেনি। তা হলে কী ভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছল ওই শাখার চেক বই? বোধগম্য হচ্ছে না।
এই ঘটনায় অনেকে আবার আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের নথিপত্র ব্যবহার করে কোনও জঙ্গি সংগঠন এই লেনদেন করছেন না তো? তা হলে তাঁরাও ফেঁসে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা ওই বাসিন্দাদের। রামজিৎ মুর্মু নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “আমার স্ত্রী মামনি মুর্মুর নামে চেক বই এসেছে। তার মোবাইলে মেসেজও এসেছে। অথচ স্ত্রী-র কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। হাজার টাকা ধান বিক্রির টাকা ঢুকেছে বলে মেসেজে দেখাচ্ছে, অথচ আমার এক ছটাক জমিও নেই। কী করে এটা হল, বুঝে উঠতে পারছি না।”
গ্রামের আর এক বাসিন্দা অর্জুন মান্ডির স্ত্রী রেখা মান্ডির নামেও চেক বই এসেছে। অর্জুন বলেন, “কয়েকদিন আগে আমার স্ত্রী-র নামে ধনেখালির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের চেক বই আসে। তার পরেই মোবাইলে টাকা ঢোকার মেসেজ পাই। দু’দিন পর সে টাকা তুলে নেওয়ার মেসেজ আসে। আমরা গরিব মানুষ। চেক বই কোনও দিন ব্যবহার করিনি। হাজার হাজার টাকা লেনদেনের কোনও প্রশ্নই নেই। কার টাকা, কোথা থেকে আসছে, জানি না। কোনও জালিয়াতিতে ফেঁসে যাব না তো? ভেবেই ভয় লাগছে।”
ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ম্যানেজার সহদেব মুর্মুর মতে, “ব্যাঙ্কের কোনও আধিকারিক এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। না হলে এমনটা হতে পারে না। এটা একটা বড় চক্র।” তাঁর দাবি, “সাধারণ মানুষের অজান্তে তাঁদের নথিপত্রের সাহায্যে ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে বড়সড় আর্থিক প্রতারণা চলছে।”