—ফাইল চিত্র।
বর্ধমানের শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টি সীতাভোগ এবং মিহিদানা এ বার উঠে এল ডাক বিভাগের প্রকাশিত বিশেষ ডাকটিকিটে। এই দুই মিষ্টির জনপ্রিয়তা বাড়াতেই কেন্দ্রের তরফে এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন ডাক বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকরা। শুক্রবার বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরে একটি অনুষ্ঠানে সীতাভোগ-মিহিদানার ছবি দেওয়া ডাকটিকিটের ফার্স্ট ডে কভার উদ্বোধন করা হয়। জেলার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে এই দুই মিষ্টির কার্যত সরকারি স্বীকৃতি মিলল। এতে তাঁরা যে আনন্দিত, তা খোলাখুলিই জানিয়েছেন বর্ধমান শহরের সীতাভোগ-মিহিদানার কারবারিরা।
২০১৭-এর ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ভৌগোলিক স্বীকৃতি (‘জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা জিআই) তকমা লাভের পরে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তবে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রচারের অভাবে দেশ জুড়ে সীতাভোগ-মিহিদানার নাম সে ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তাঁদের আশা, ডাক বিভাগের এই পদক্ষেপে এ বার হয়তো সে খামতি মিটবে।
শুক্রবার ওই বিশেষ ডাকটিকিটটি উদ্বোধন করেন দক্ষিণবঙ্গ রিজিয়নের পোস্টমাস্টার জেনারেল শশী সালিনী কুজুর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পোস্ট সৈয়দ ফরজ হায়দর নবি এবং বর্ধমান সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রমোদকুমার সিংহ। এ বার থেকে দেশের সমস্ত রাজ্যের ডাকঘরেই এই ফার্স্ট ডে কভার-টি সাজানো থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। শশী বলেন, “বর্ধমানের এই বিখ্যাত মিষ্টিগুলির জনপ্রিয়তার বাড়ানোর লক্ষ্যে এর প্রচার করছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। ফলে দেশের অন্যত্র সীতাভোগ-মিহিদানার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।”
শুক্রবার বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরে একটি অনুষ্ঠানে সীতাভোগ-মিহিদানার ছবি দেওয়া ডাকটিকিটের ফার্স্ট ডে কভার উদ্বোধন করা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
সীতাভোগ-মিহিদানার উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তার মধ্যে একটি হল, ১৯০৪ সালে এটি প্রথম তৈরি করা হয়েছিল। সে বছর বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চন্দ মহাতাবকে 'রাজাধিরাজ' উপাধি দেয় ইংরেজ সরকার। সেই উপলক্ষে বর্ধমানের রাজপ্রাসাদে এলাহি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলার তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন। কথিত রয়েছে, বড়লাটকে খুশি করতে বর্ধমানের জনপ্রিয় মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন বিজয়চন্দ। ভৈরবচন্দ্রই সীতাভোগ এবং মিহিদানা নামে দু’টি নতুন মিষ্টি তৈরি করেন। যা সকলের মন জয় করে নেয়। তার পর থেকে বর্ধমান-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে এর জনপ্রিয়তা বাড়লেও দেশের অনেকেই এই মিষ্টিগুলির স্বাদ পাননি।
শুক্রবার ডাক বিভাগের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রমোদকুমার। তিনি বলেন, “এই প্রথম কোনও সরকারি বিভাগ এ ভাবে সীতাভোগ-মিহিদানার প্রচার করল। এর ফলে এই মিষ্টিগুলির চাহিদা বাড়বে। গোটা দেশেই বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানার নাম ছড়িয়ে পড়বে।”