পুজোর দিনগুলোতে ঢাকের কাঠিতে বোল তুলতে চলছে প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
অতিমারির কোপে কেউ টোটো চালিয়েছেন। কেউ বা আবার বছরভর রিকশা চালিয়ে সংসার টেনেছেন। তবে পুজোর মরসুমের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। কয়েক পুরুষ ধরে পুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকঢোল বাজানোই আদতে তাঁদের পেশা। তবে করোনার কবলে গত বছর তা-ও বন্ধ ছিল। চলতি বছরে ফের ঢাক বাজানোর বায়না আসছে ভিন্ রাজ্য থেকে। ফলে বাড়তি রোজগারের আশায় পুজোর দিন গুনছেন হুগলির দেবানন্দপুরের মানুষপুর এলাকার ঢাকিরা।
বছরখানেক ধরে তাকে তুলে রাখা ঢাক নামিয়ে চলছে ঝাড়পোঁছ। ঢাকের চামড়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে টান টান করে বেঁধে ফের কাঁধে নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে মহড়া। দেবানন্দপুরের ইডেন পার্ক এলাকার হরিপদ দাস, বাঁকু দাস, কাজল দাসের মতো ঢাকিদের এ বার পুজোয় ডাক পড়ছে তেলঙ্গানার সেকেন্দরাবাদ থেকে। সেখানকার দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজাতে যেতে হবে।
হরিপদ-বাঁকুরা জানিয়েছেন, সারা বছর টুকটাক পুজোয় বায়না পেলেও দুর্গাপুজোর সময়ে তাঁদের আয় ভাল হয়। হায়দরাবাদ, সেকেন্দরাবাদ, নৈনিতাল, নাগপুর, সিকিম বা অসম থেকে পুজোয় ঢাক বাজানোর বায়না আসে। অনেকে আবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও বায়না পেয়ে যান। কলকাতার বড় বড় পুজোতেও ঢাক বাজানোর বরাত জোটে। তাই শারদোৎসবের দিকে তাঁরা তাকিয়ে থাকেন বছরভর। তবে গত বছর অতিমারিতে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া হয়নি। এমনকি, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কলকাতায়ও যেতে পারেননি। মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে ঢাক বাজানো হয়নি। ফলে গত বারের পুজোর উৎসবব বেরঙিন হয়ে গিয়েছিল। করোনা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা জানা নেই। তাই ঢাকে বোল তোলা ছেড়ে রিকশা, টোটো চালিয়ে গোটা বছর রোজগার করছেন হরিপদরা। তবে এ বার আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। ইডেন পার্কের ঢাকি বাঁকু দাস বলেন, “প্রতি বারই পুজোর সময় ভিন্ রাজ্যে ঢাক বাজাতে যাই। গত বছর যাওয়া হয়নি। এ বারও অতিমারির প্রকোপ রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ঢাক বাজানোর ডাক এসেছে। পুজোর সময় দু’টো বাড়তি পয়সা ঘরে আসবে। না হলে সারা বছর রিকশা চালিয়ে কোনও মতে সংসার চলে।” তবে বায়না পেলেও দুশ্চিন্তা কাটেনি। অনেকেরই এখনও করোনার টিকা নেওয়া হয়নি। কাজল দাস নামে আর এক ঢাকি বলেন, “এখনও টিকা নেওয়া হয়নি। তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। তবু এ বার অন্তত পুজোর দিনগুলোতে ঢাকের কাঠিতে বোল তুলতে পারব। তারই প্রস্তুতি চলছে।”