—নিজস্ব চিত্র।
লন্ডনের পর এ বার বাঁকুড়ার পদ্মে সাজবে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাঙালিদের দুর্গাপুজো। অষ্টমীতে সেই পদ্মেই হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। পুজোর আগেই তার বরাত জুটেছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের পদ্মচাষিদের কাছে। করোনার বিষণ্ণ আবহেও তাই পদ্মচাষিদের মুখে ফুটেছে চওড়া হাসি।
বাঁকুড়া জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার পদ্মের বরাত পাওয়া গিয়েছে। রফতানিকারী সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তাও প্রায় পাকা। পঞ্চমীর দিন সকালে জেলার জঙ্গলমহলের একাধিক পুকুর থেকে পদ্ম তুলে পৌঁছে দেওয়া হবে কলকাতায়। এর পর মালবাহী বিমানে বাঁকুড়ার পদ্ম উড়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়।
ফুলের কারবারিদের দাবি, বাংলার অন্যান্য জেলার তুলনায় বাঁকুড়ার পদ্মফুল পুকুর থেকে তোলার পরও বেশ কয়েক দিন একই রকম তরতাজা থাকে। ফলে রফতানিকারী সংস্থাগুলিকে সাধারণত লোকসানের মুখে পড়তে হয় না।
সিমলাপাল এবং খাতড়ায় সারা বছরই পদ্মচাষ হয়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রসঙ্গত, বছর চারেক আগে থেকেই পুজোর সময় বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে বাঁকুড়ায় পদ্ম। ২০১৮-তে তা লন্ডনে পৌঁছেছিল। পরের বছরেও এ জেলার পদ্মে অষ্টমীর পুজো সেরেছিলেন লন্ডনের একাধিক পুজো উদ্যোক্তা। তবে গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে তাতে ছেদ পড়ে। বিদেশ থেকে বরাত না পেয়ে স্থানীয় বাজারে নামমাত্র দামে পদ্ম বিক্রি করতে হয়েছিল চাষিদের। তবে এ বার পুজোর অনেক আগেই বরাত পাওয়ায় পদ্মচাষিদের কপাল ফিরেছে। মাসখানেক আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাঙালি পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে পদ্মফুলের জন্য কলকাতার একটি রফতানিকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাঁকুড়া জেলা উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেই সংস্থা। দফতরের মধ্যস্থতায় বাঁকুড়ার সিমলাপাল এবং খাতড়া ব্লকের একাধিক চাষির উৎপাদিত পদ্ম অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হবে বলে স্থির হয়। দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর মলয় মাজি বলেন, “বাঁকুড়ার উৎপাদিত ফল, ফুল বা সব্জিও বিদেশের বাজারে পাঠানোর চেষ্টা সব সময়ই রয়েছে। একটি রফতানিকারী সংস্থার হাত ধরে পুজোর আগে পাঁচ হাজার পদ্মফুল অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিচ্ছে। তা ছাড়া, আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তা চূড়ান্ত হলে পুজোর আগে অন্যান্য দেশেও পাড়ি দেবে বাঁকুড়ার পদ্ম।”
সিমলাপাল এবং খাতড়ার বেশ কয়েকটি পুকুর ইজারা নিয়ে সারা বছরই পদ্মচাষ করেন মন্মথ মাহাতো। সিমলাপালের বাসিন্দা মন্মথ বললেন, “পুকুরে পদ্মচারা বসিয়ে দিলেই হয় না। সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেগুলির পরিচর্যা করতে হয়। নিয়ম মেনে জৈব সার দিয়ে পোকামাকড় বা রোগের হাত থেকে চারাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। তবে স্থানীয় বাজারে পদ্মের তেমন দাম নেই। সাধারণত এক-একটা পদ্মফুল বেচে বড়জোর এক থেকে দেড় টাকা আয় হয়। বিদেশে গেলে এই পদ্মের বাড়তি দাম পাব।” তাঁদের পদ্মফুল বিদেশে যাওয়ায় খুশি আর এক চাষি অনিরুদ্ধ হালদার। তিনি বলেন, “নিজেরা হয়তো কখনও বিদেশে যেতে পারব না। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত পদ্মফুল যে বিদেশে যাচ্ছে, এটাই বড় প্রাপ্তি।”