প্রবল বর্ষণের পরে বৃহস্পতিবার রাতে জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বাংলা পঞ্জিকামতে ভরা বর্ষা। তবে এ বার জুলাইয়ের অধিকাংশ সময়েই বর্ষা কার্যত ঝিমিয়ে ছিল। একেবারে শেষ লগ্নে এসে সে শুধু যে গা-ঝাড়া দিয়েছে তা-ই নয়, দারুণ মেজাজে যথেচ্ছ চার-ছয় হাঁকাতেও শুরু করেছে। সৌজন্য, বাংলাদেশ উপকূল ও লাগোয়া গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে থাকা একটি নিম্নচাপ। একটানা বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের বহু এলাকা বিপর্যস্ত। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, শুক্রবারেও গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে মূলত পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। মৎস্যজীবীদের সাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছিল বুধবার। অল্পবিস্তর বৃষ্টিও হয় ওই দিন। বর্ষণের দাপট বাড়ে গভীর রাতে। বৃহস্পতিবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। আকাশ ঘন মেঘে ঢাকা ছিল। বৃষ্টি হয়েছে দফায় দফায়। কখনও বা ঝিরিঝিরি, কখনও বা মুষলধারে। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কলকাতার আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৮৭.৪ মিলিমিটার। তবে এ দিন সন্ধ্যার পর থেকে যে-ভাবে মুষলধারে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে আবহবিদদের অনুমান, শুক্রবার সকালের হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হতে পারে। প্রবল বৃষ্টির জেরে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন। ব্যাহত হয়েছে যান চলাচলও। বহু প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ না-থাকায় স্নাতক স্তরের পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে এবং উত্তরপত্র পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
আবহবিদদের একাংশের মতে, নিম্নচাপটি ক্রমশ স্থলভূমিতে ঢুকে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যেতে পারে। তার ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি হতে পারে ওই দুই রাজ্যেও। গাঙ্গেয় বঙ্গে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে বাংলার নদী, নালা, জলাশয়, জলাধার ভরে রয়েছে। কোথাও কোথাও নদীর জলস্তর বেড়েছে। এর উপরে বিহার ও ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টি হলে সেই জলও নদীখাত বেয়ে বঙ্গে আসতে পারে। তাই বিভিন্ন জলাধারের কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবে জুন-জুলাইয়ের বৃষ্টি চাষের পক্ষে সহায়ক। তবে একটানা অতিবৃষ্টি হলে তা চাষের জমিকে জলমগ্ন করে দিতে পারে। সেই দিক থেকে বিচার করলে এই অতিবৃষ্টিতে কিছু এলাকায় চাষের ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
জুনে গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। জুলাইয়ে তেমন জোরালো বৃষ্টি না-হওয়ায় বর্ষণের রেখচিত্র নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। আবহবিদদের অনুমান, জুলাইয়ের শেষ দফায় বৃষ্টি যা দাপট দেখাচ্ছে, তাতে বর্ষণের রেখচিত্র ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। দিল্লির মৌসম ভবনের হিসেব, ১ জুন থেকে এ দিন পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ২০ শতাংশ বেশি। তবে এই পরিসংখ্যানে এ দিনের বৃষ্টির পরিমাণ যুক্ত করা হয়নি। সেটা যুক্ত হলে উদ্বৃত্ত বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে।