কালনার মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাহিনি। ছবি: শাটারস্টক।
বিষ্ণুপুরের মতো কালনাকেও বলা হয় ‘মন্দিরের শহর’। কালনায় গিয়ে পড়লে বুঝবেন, ওই অভিধা একটুও বাড়িয়ে বলা নয়। বরং কালনার আরও একটি নাম হতে পারে ‘ইতিহাসের শহর’। হুগলি এবং নদিয়ার কোল ঘেঁষা পূর্ব বর্ধমানের মফস্সলি গন্ধমাখা শহরটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র মন্দির আর তাদের ইতিবৃত্ত।
কলকাতা থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বে ওই শহরে পৌঁছোলে মনে হবে এক ধাক্কায় শ’খানেক বছর পিছিয়ে গিয়েছেন। পোড়ামাটির মন্দির, দেউল, আটচালা, পঞ্চরত্ন, পঁচিশ চুড়ো, জোড় বাংলা, রাসমঞ্চের নানা রকম স্থাপত্য তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার এক কালের সমৃদ্ধ জনপদের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দেবে কালনা। সেই জনপদের কাহিনিতে যেমন শ্রীচৈতন্য রয়েছেন, তেমন রয়েছেন শাক্ত উপাসক ভবা পাগলা। আরও একটু পিছোলে সপ্তম শতকের বাংলার রাজা শশাঙ্ক, বন্দর শহর তাম্রলিপ্ত, তাম্রলিপ্তের আদি রাজ্য সুহমা এবং তার টানে মহাভারতের ক্ষীণ সুতোও জুড়ে যাবে কালনার সঙ্গে। ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে তাই শীতের রোদ গায়ে মেখে এক দিনের সফরে চলে আসতে পারেন অম্বিকা কালনায়।
কালনার ১০৮ শিবমন্দির। ছবি: শাটারস্টক।
ইতিহাস যা বলছে
অম্বিকা কালনার কথা প্রথম জানা যায় ষষ্ঠ শতকের একটি তন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ কুব্জিকা তন্ত্রে। পরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজ়ান্ডার কানিংহ্যামের লেখায় জানা যায়, সপ্তম শতকে যখন বাংলা এবং আশপাশের বিস্তৃত এলাকায় রাজা শশাঙ্কের অধীনে গৌড় রাজ্যের বিস্তার হচ্ছে, সেই সময়ে কালনা ছিল ভাগীরথী তীরবর্তী অন্যতম বড় নৌবন্দর। তাম্রলিপ্তের প্রধান শহর। যে তাম্রলিপ্ত আবার সুহমা রাজ্যের অন্তর্গত। যে সুহমার উল্লেখ রয়েছে মহাভারতেও।
তবে কালনার ইতিহাস যত পিছিয়েই নিয়ে যাক না কেন, এর প্রকৃত সমৃদ্ধি হয়েছিল আঠারো শতকে। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচন্দ্র রাইয়ের আমলে। স্থানীয় ইতিহাস বলছে তিনিই কালনায় বহু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তত দিনে অবশ্য কালনা মুসলমান শাসকের হাতে এক বার বিজিত হয়েছে। ত্রয়োদশ শতকে কালনায় সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুসলমান নৃপতি জ়াফর খান। পরে কালনা চৈতন্যদেবের ‘ছোঁয়া’ পেয়ে পরিণত হয় বৈষ্ণব তীর্থে। পঞ্চাদশ শতকের মঙ্গলকাব্যেও উল্লেখ হয়েছে কালনার। আবার ষোড়শ শতকে কালনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জামে মসজিদ। সেই সময় অবশ্য অম্বিকা কালনা তার নতুন নাম পায়নি। বৈষ্ণব ধর্মের বহু লিপি এবং গ্রন্থে অম্বিকা কালনার উল্লেখ রয়েছে ‘অম্বোয়া মুলুক’ বলে। এমনকি, সপ্তদশ শতকে ভন ডেন ব্রুকের আঁকা বাংলার মানচিত্রেও কালনাকে বলা হয়েছে ‘অম্বোয়া’।
প্রতাপেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটার কাজ। ছবি: শাটারস্টক।
নাম বিতর্কের নেপথ্য কথা
অম্বিকা কালনা নামের উৎস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে এ-ও বলেন, এক কালে কালনা অঞ্চলে অম্বরীশ ঋষির আশ্রম ছিল। তিনি দেবী দুর্গার আর এক রূপ অম্বিকার উপাসনা করতেন। আবার অম্বিকাকে জৈনদের দেবী বলেও উল্লেখ করেছেন ইতিহাসবিদ উমাকান্ত প্রেমানন্দ শাহ। সেই তথ্যের সূত্র ধরে কালনার ইতিহাসকে সপ্তম শতকের পাল সাম্রাজ্যের সঙ্গেও জুড়েছেন। প্রাচীন ওই সমস্ত ইতিহাসের সবটুকু অবশ্য চোখের সামনে দেখতে পাবেন না কালনায় গেলে। তবু যা দেখবেন, তা কম নয়।
কী কী দেখবেন?
বিষ্ণুপুরকেও বাংলার ‘মন্দির শহর’ বলা হয়। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, প্রচার এবং পর্যটনের উন্নতির দিক থেকে বিষ্ণুপুর কালনার থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু টেরাকোটা মন্দির স্থাপত্যের কথা যদি বলতে হয়, তবে বৈচিত্রে কালনার মন্দির বিষ্ণুপুরকে দশ গোল দেবে। পোড়ামাটির মন্দিরের যে কোনও স্থাপত্যের নাম মনে করুন, সেই স্থাপত্য নিশ্চিত ভাবে কালনায় রয়েছে। তবে রয়েছে একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। তাই কালনায় গেলে প্রথমেই কয়েকটি ভাগে ভেঙে নিতে হবে বেড়ানোর সময়।
নবকৈলাস বা ১০৮ শিবের মন্দির
কালনার অন্যতম বড় আকর্ষণ ১০৮ শিবের মন্দির। তাই প্রথমেই আসুন এখানে। দু’টি সমান্তরাল বৃত্তে সার দেওয়া শিবের মন্দির। বাইরের বৃত্তে রয়েছে ৭৪টি। ভিতরের বৃত্তে ৩৪টি। বর্ধমানের রাজারা শিবভক্ত ছিলেন। ১৮০৯ সালে বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর ওই মন্দির তৈরি করান। বলা হয়, ওই ১০৮ মন্দির এমন অদ্ভুত শৈলীতে তৈরি যে, ভিতরের বৃত্তের মাঝে একটি কুয়োর মাঝখানে দাঁড়ালে নাকি সবক’টি মন্দির একসঙ্গে দেখা যায়। প্রতিটি মন্দিরই আটচালার স্থাপত্যে তৈরি। ভিতরে রয়েছে একটি করে শিবলিঙ্গ। বাইরের বৃত্তে একটি করে শ্বেতপাথর এবং একটি করে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে। ভিতরের বৃত্তের সব ক’টি মূর্তিই শ্বেতপাথরের। এক কালে টেরাকোটার কাজে ওই ১০৮ মন্দিরের গায়ে রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি আঁকা ছিল। এখন অবশ্য তার অধিকাংশই বিলুপ্ত। আপাতত ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত মন্দির চত্বরটি।
রাসমঞ্চ। ছবি: শাটারস্টক।
রাজবাড়ি চত্বর
নবকৈলাসের ঠিক বিপরীতেই কালনার রাজবাড়ি চত্বর। এক বার সেখানে প্রবেশ করলে মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। ঢুকেই ডান দিকে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। তার পরে দু’পা অন্তর একটি করে স্থাপত্যকীর্তি। ওই চত্বরেই রয়েছে, প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাসমঞ্চ, লালজিউ মন্দির এবং নাটমণ্ডপ, গিরিগোবর্ধন মন্দির, সমতল ছাদের রূপেশ্বর শিবের মন্দির, পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির এবং ২৫ চুড়ো বিশিষ্ট কৃষ্ণচন্দ্রজি মন্দির। রাজবাড়ি চত্বরের বাইরে বেরোলে আশপাশে দেখা মিলবে আরও তিন মন্দিরের— জলেশ্বর, রত্নেশ্বর এবং রামেশ্বর।
এর মধ্যে প্রতাপেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটার কাজ মুগ্ধ করবেই। গৌর-নিতাইয়ের লীলা থেকে শুরু করে রামের অভিষেক, রাবণবধ, মহিষাষুরমর্দিনী দুর্গা, রাধাকৃষ্ণের মিলন— একের পর এক পৌরাণিক কাহিনি মূর্তি হয়ে গেঁথে আছে মন্দিরের দেওয়ালে। মন্দিরটি বর্ধমানের রাজা প্রতাপচাঁদ বানিয়েছিলেন ১৮৪৯ সালে তাঁর স্ত্রী পেয়ারিকুমারী দেবীর জন্য। খুব বেশি দিনের পুরনো নয়, তাই কাজগুলি এখনও স্পষ্ট এবং অক্ষত।
প্রতাপেশ্বর মন্দির থেকে দু’পা এগোলেই রাসমঞ্চ। ইসলামিক স্থাপত্যের প্রভাব রয়েছে এর গম্বুজে। গম্বুজটি আট দরজায় ঘেরা একটি বৃত্তের মাথায়। তাকে ঘিরে খোলা ছাদের ২৪ দরজায় ঘেরা মঞ্চ। বর্ধমানের রাজা রাস উৎসব পালন করতেন ওই মঞ্চে। রাসের সময় কিছু দূরে থাকা লালজিউ এবং মদনলাল গোপাল জিউর মন্দির থেকে মূর্তি এনে রাখা হয় ওই মঞ্চে।
রাসমঞ্চ থেকে এগিয়ে উঁচু পাঁচিলে ঘেরা লালজিউর মন্দির চত্বর। ওই চত্বরে রয়েছে ২৫ চুড়ো বিশিষ্ট লালজিউ মন্দির (পশ্চিমবঙ্গে ২৫ চুড়ো মন্দির বা পঞ্চবিংশতি রয়েছে কেবল পাঁচটি। তার মধ্যে তিনটিই কালনাতে)। তার লাগোয়া চার চালা বিশিষ্ট নাটমন্দির এবং গিরিগোবর্ধন মন্দির। নাটমন্দির এবং লালজিউ মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখার মতো। অন্য দিকে, গিরিগোবর্ধন মন্দিরটি তৈরি হয়েছে অনেকটা দাক্ষিণাত্যের মন্দিরের শৈলীতে। ১৭৫৮ সালে তৈরি ওই মন্দিরের চুড়ো তৈরি হয়েছে পাহাড়ের আদলে। তার খাঁজে খাঁজে রয়েছে জীবজন্তু এবং মানুষের মূর্তি।
বাঁ দিক থেকে রূপেশ্বর শিব মন্দির, পঞ্চরত্ন শিবের মন্দির এবং পিছনে কৃষ্ণজিউর মন্দির। ছবি: শাটারস্টক।
বাংলার টেরাকোটায় ব্রিটিশ স্থাপত্যের প্রভাবও পড়েছিল। কালনার রাজবাড়ি চত্বরের রূপেশ্বর শিবের মন্দিরে সেই ছাঁদ স্পষ্ট। আবার তার ঠিক পাশেই রয়েছে বাংলার আদি অকৃত্রিম আটচালার আদলের ছোট ব়ড় পাঁচটি শিবের মন্দির, যাকে একযোগে বলা হয় পঞ্চরত্ন। সেখান থেকে সামান্য এগিয়ে পাঁচিলে ঘেরা কৃষ্ণচন্দ্রজিউর মন্দির। লালজিউর মন্দিরের সামনে যেমন নাটমন্দির রয়েছে, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের সামনে তেমনই রয়েছে তিন স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রবেশপথ— ‘জগমোহন’। ওই মন্দিরের ভিতরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। কৃষ্ণচন্দ্রজিউ মন্দির চত্বরে রয়েছে আরও একটি আটচালার টেরাকোটা মন্দির। নাম বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির। দু’টি মন্দিরেরই দেওয়ালে রয়েছে সূক্ষ্ম টেরাকোটার কাজ।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
টেরাকোটা মন্দিরের আরও একটি বিশেষ শৈলী হল জোড় বাংলা। কালনায় সেই জোড় বাংলা মন্দিরের দেখা মিলবে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে। শোনা যায়, ঋষি অম্বরীশ বা অম্বু ঋষি এখানেই অম্বিকা সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো করতেন। যা থেকে অম্বিকা কালনার নাম। যদিও সেই কাহিনি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জোড় বাংলার স্থাপত্যে তৈরি ওই মন্দিরেও রয়েছে টেরাকোটার কাজ। অবশ্য আজ মন্দিরের গায়ে রঙের পরতে, সেই শিল্পের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া মুশকিল।
সিদ্ধশ্বরী অম্বিকা কালীর জোড় বাংলা স্থাপত্যের মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
অনন্ত বাসুদেব মন্দির
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের কাছেই আটচালার আদলে তৈরি টেরাকোটার মন্দির অনন্ত বাসুদেবের। অষ্টাদশ শতকে তৈরি ওই মন্দিরের টেরাকোটার কাজ এখন লুপ্তপ্রায়। মন্দিরটিও এখন রং করে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
গোপালজিউ মন্দির
কালনার তৃতীয় ২৫ চুড়োর মন্দির বা পঞ্চবিংশতিটি গোপালবাড়ি এলাকায়। সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে যাওয়ার আগেই পড়বে গোপালবাড়ি। ১৭৬৬ সালে তৈরি ওই মন্দিরটির গায়ের টেরাকোটার কাজ এখনও স্পষ্ট। অদ্ভুত ভাবে টেরাকোটার ফলকে উঠে এসেছে ইংরেজদের সঙ্গে বঙ্গরমণীর সম্পর্কের ইতিহাসও।
জগন্নাথবাড়ি
টেরাকোটার কাজ দেখতে হলে আরও একটি মন্দিরে না এলেই নয়। কালনার জগন্নাথবাড়ি এলাকার জোড়া মন্দির। ১৭৫৩ সালে তৈরি ওই জোড়া মন্দির পড়ে রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। তবে মন্দিরের গায়ের কিছু টেরাকোটার কাজ দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। পর্তুগিজ়দের রণতরী, যু্দ্ধক্ষেত্রের ছবি, ইংরজদের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সঙ্গে রাজাদের হাতিতে সওয়ার বাহিনীর যুদ্ধ, জমিদারের হুঁকা-বিলাস সবই চিত্রিত মন্দিরের গায়ে।
প্রতাপেশ্বর মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
মহাপ্রভুবাড়ি
জনশ্রুতি, চৈতন্যদেব তাঁর অন্যতম প্রিয় ভক্ত গৌরীদাসের সঙ্গে দেখা করতে নিজে এসেছিলেন কালনায়। পরে নীলাচলে যাওয়ার আগে চৈতন্যদেবের বার্তা পেয়েই গৌরীদাস প্রতিষ্ঠা করেন গৌরাঙ্গ মন্দির। বৈষ্ণবদের বিশ্বাস, যে কৃষ্ণের অবতার চৈতন্য, সেই কৃষ্ণেরই বৃন্দাবনের বন্ধু সুবল জন্মান্তরে গৌরীদাস হয়ে এসেছেন। মহাপ্রভুবাড়িতে গৌরীদাসকে চৈতন্যদেবের দেওয়া একটি হাতে লেখা ভগবদ্গীতা সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে পুজো করা হয় নিমকাঠের তৈরি চৈতন্য এবং নিত্যানন্দের বিগ্রহ। তবে ওই বিগ্রহ সব সময় পর্যটকেরা দেখতে পান না। পূজারিকে বিশেষ অনুরোধ করলে তিনি ঝাঁকিদর্শনের অনুমতি দেন। তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য খোলা হয় গর্ভগৃহের দরজা, তার মধ্যেই দর্শন সারতে হয় দর্শনার্থীকে। কাছেই রয়েছে ৫০০ বছরের পুরনো একটি তেঁতুল গাছ। যেখানে গৌরীদাসের সঙ্গে এসে চৈতন্যদেব দেখা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করেন বৈষ্ণব ভক্তেরা। সেটিও দেখে আসা যায়।
ভবা পাগলার মন্দির
শাক্ত উপাসক ভবা পাগলার গান অনেকেই শুনেছেন। কালনায় এলে সেই ভবা পাগলার কালী আরাধনার স্থানের সঙ্গে পরিচয় হবে। ভবা পাগলার আশ্রমের কাছেই আছে পাতালগঙ্গা।
দাঁতনকাঠিতলা মসজিদ
১৪৯০ সালে তৈরি ওই মসজিদের দেওয়ালে টেরাকোটার আখ্যান ছিল এক কালে। এখন প্রায় পুরোটাই অবলুপ্ত। পড়ে আছে শুধু কয়েকটি স্তম্ভ। তবু ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো ওই মসজিদে এক বার ঘুরে আসা যেতে পারে কালনায় এলে।
কালনার জোড়া দেউল। ছবি: সংগৃহীত।
বৈদ্যপুর জোড়া দেউল
রাজবাড়ি চত্বর থেকে আধ ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে বৈদ্যপুরের জোড়া দেউল। বৈঁচি-কালনা রোডেই পড়বে। তাই কালনা ঘুরে ফেরার সময় অথবা কালনায় ঢোকার মুখে দেখে নেওয়া যেতে পারে ১৫৫০ সালে তৈরি দেউল স্থাপত্যের ওই মন্দির। পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত ওই দেউলের গায়ে টেরাকোটার ছোট বড় ফুল আর সূক্ষ্ম কাজের প্যানেলের শৈলীতে ওড়িশার স্থাপত্যের মিল রয়েছে।
কী ভাবে পৌঁছবেন
সড়ক পথে: কলকাতা থেকে এলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে গুড়াপ পর্যন্ত এসে ডান দিকে মগরা-গুড়াপ রোড ধরে ভাস্তারা মোড় পর্যন্ত এগিয়ে আসুন। সেখান থেকে বাঁ দিকে বেঁকে বৈঁচি-কালনা রোড ধরে খানিক দূর এগোলেই পৌঁছবেন কালনায়। মোট দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। অথবা কলকাতা থেকে যশোর রোড ধরে বিরাটি পর্যন্ত এসে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে তার পরে ঈশ্বরগুপ্ত সেতু পার করে বাঁশবেড়িয়া মোড় পৌঁছন। সেখান থেকে ডান দিকে এসটিকেকে রোড ধরেও কালনা পৌঁছতে পারেন। দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার কাছাকাছি।
রেল পথে: শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে কাটোয়া যাওয়ার ট্রেন ধরে অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমে স্টেশন থেকে টোটো বা অটোয় পৌঁছে যেতে পারেন মন্দির শহরের কেন্দ্রে।
পাখির চোখে কালনার ১০৮ শিবমন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
কোথায় খাবেন?
কালনার সুনাম তার মিষ্টিতে। মাখা সন্দেশ তো রয়েছেই, এ ছাড়াও কালনার জোড়া সন্দেশ, নোড়া পান্তুয়া, ছানার মুড়কিও চেখে দেখতে ভুলবেন না। শীতে বেড়াতে গেলে নলেন গুড়ের স্বাদ বাড়তি পাওনা। তবে ভারী খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করতে হবে মন্দির চত্বর বা চকবাজার এলাকার ছোটখাটো রেস্তরাঁর উপর। গাড়িতে এলে খাবার সঙ্গে নিয়ে আসতেও পারেন। তবে মন্দির চত্বরে খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। ফাঁকা জায়গায় খাওয়াদাওয়া করা যেতে পারে। অথবা হাইওয়েতে আসার পথে ধাবা থেকেও খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা
সাধারণত সকালে বেরিয়ে রাতে ফিরে আসা যায় কালনা ঘুরে। তবে থাকতে চাইলে কালনায় মাঝারি মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।