BJP Leaders Quit Party at Nandigram

‘শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভে’ সদলবলে বিজেপি-ত্যাগ নন্দীগ্রামের দুই নেতার, ইঙ্গিত তৃণমূলে ফেরারও

বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন অশোক। দেবাশিস ছিলেন নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। রবিবার তাঁরা বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩০
Share:

(বাঁ দিকে থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, অশোক করণ এবং দেবাশিস দাস। —ফাইল চিত্র।

নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময়ে প্রথম সারির মুখ ছিলেন তাঁরা। তৃণমূল থেকে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু দলের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে পদ্ম-ত্যাগ করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের দুই ‘প্রভাবশালী’ নেতা অশোক করণ এবং দেবাশিস দাস। রবিবার বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিধায়ক শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দু’জন। তাঁদের বিজেপি-ত্যাগে শোরগোল নন্দীগ্রামে। ইঙ্গিত মিলছে, সদলবলে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেবেন। যদিও দুই নেতার দলত্যাগের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।

Advertisement

বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন অশোক। দেবাশিস ছিলেন নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। রবিবার তাঁদের সঙ্গে শতাধিক বিজেপি কর্মী দল ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন দুই নেতা। দলত্যাগের কারণ হিসাবে অশোক এবং দেবাশিস অভিযোগ করেন, বিজেপি পরিচালিত একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘লাগামছাড়া দুর্নীতি’ চলছে। তাঁরা বলেন, ‘‘দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছি আমরা। কিন্তু তার পরেও দলের উপরতলার নেতৃত্ব উদাসীন ছিলেন। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁরা মুখে কুলুপ দিয়েছেন। সেই কারণেই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ দেবাশিস জানিয়েছেন, ছাত্রজীবন থেকে তিনি ডানপন্থী আন্দোলনে যুক্ত। ২০০৩ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০০৭ সালে জমি আন্দোলনের সময় আমরা বোমা-গুলির মুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি। পরবর্তী কালে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে আমরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। তার পরে আমাদের হাতেই নন্দীগ্রামে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু এখন বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে লাগামছাড়া দুর্নীতি দেখতে পাচ্ছি। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা শুভেন্দু অধিকারীর রোষের মুখেও পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা বিজেপি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দলের সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরে আমরা (অশোক) বিজেপির সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। তৃণমূলে যোগ দেব কি না, সেটা সময় বলবে।’’

এক সময়ে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের দায়িত্ব সামলানো দেবাশিস জানিয়েছেন, শুভেন্দুকে দেখেই তাঁদের বিজেপিতে যাওয়া। কিন্তু সেই মোহভঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কারণ, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশই দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছেন না শীর্ষ নেতৃত্ব। দেবাশিসের দাবি, ‘‘শুধু গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতেই লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। তার পরে নেতৃত্বের মুখে কুলুপ দেখলাম। আর এই দল করা সম্ভব হল না।’’ আর অশোক জানান, তাঁরা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আর গেরুয়া শিবিরে থাকতে পারেননি। কেন? অশোকের কথায়, ‘‘এই দলে থাকা এখন যন্ত্রণার। এক সময়ে যে নবারুণ নায়েক জেলা সভাপতি ছিলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় জেলে গিয়েছেন। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই ঘটনা দলীয় নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরার পরেও তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। বিজেপির মুখ এক রকম আর মুখোশ আলাদা। এই দলের সঙ্গে কী ভাবে মানুষ চলতে পারে?’’

Advertisement

গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির জয়ের ক্ষেত্রে অশোক এবং দেবাশিসের ভূমিকার কথা স্বীকার করে নেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তবে তাঁদের পদ্মশিবির ছাড়া নিয়ে বিজেপি নেতাদের দাবি, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবছেন দুই নেতা। দু’জনের দলবদলের কোনও প্রভাবই বিজেপিতে পড়বে না বলে দাবি পদ্মনেতাদের। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পালের কটাক্ষ, ‘‘কিছু মানুষ নিজের ধান্দায় দলবদল করে বিজেপিতে এসেছিলেন। এখন তাঁদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। তাই আবার তাঁরা চলে যাচ্ছেন। আমরা যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিজেপিতে রয়েছি, তাঁরা সকলেই দলে আছি। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে। হামলা, মারধর, পুলিশি সন্ত্রাস— কোনও কিছুতেই আমরা বিজেপির সঙ্গ ছাড়িনি। যাঁরা তৃণমূলে যাচ্ছেন, তাঁরা কোনও দিন মন থেকে বিজেপি করেননি। এঁরা আরও আগে তৃণমূলে চলে গেলে বিজেপির মঙ্গলই হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement