তাপপ্রবাহ চলবে আরও কিছু দিন। —ফাইল চিত্র।
এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছিল তাপপ্রবাহের দাপট। সেই দাপট এখনও অব্যাহত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও যে তাপপ্রবাহের হাত থেকে নিস্তার মিলবে না, তা জানিয়ে দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ৫ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলতে পারে গোটা দক্ষিণবঙ্গে। রবিবার থেকে অবশ্য রাজ্যের কিছু জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই বৃষ্টি যে স্বস্তি দেবে না, সেই পূর্বাভাসও দিয়েছে আলিপুর।
বুধবার সকাল থেকে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। কলকাতা জুড়ে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি থাকবে সারা দিন। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৯ ডিগ্রি বেশি। বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকতে পারে।
কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় তাপপ্রবাহ এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে বুধবার। পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ— দক্ষিণের এই আট জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার চৃড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী চার-পাঁচ দিনে গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই।
দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ— উত্তরের এই দুই জেলায় তাপপ্রবাহ চলতে পারে। তবে উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা না থাকলেও শুকনো এবং গরম আবহাওয়া থাকবে। গরমের মাঝেই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং কোচবিহার জেলার কয়েকটি এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস। বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও বইতে পারে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও। এই বৃষ্টি চলতে পারে রবিবার পর্যন্ত।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ১৯ থেকে ২১ এপ্রিল তিন দিন ধরে চলেছিল তাপপ্রবাহ। এর পর ২৪ এবং ২৫ এপ্রিল টানা দু’দিন ধরে চলেছিল তাপপ্রবাহ। মাঝে ২৬ তারিখ একটু স্বস্তি দিয়েছিল গরম। পরের দিন থেকে আবার শুরু হয় দহনজ্বালা, যা মঙ্গলবারও চলেছে। অর্থাৎ ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা চার দিন চলল তাপপ্রবাহের তৃতীয় ‘স্পেল’। মঙ্গলবার কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর আগে শেষ বার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির গণ্ডি ছাড়িয়েছিল ১৯৫৪ সালে। সে বছর এপ্রিলে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৭০ বছরের নজির প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। ৭০ বছরে আর কখনও শহরের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছয়নি।
চলতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বেশ কয়েক দিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির উপরেই। দোসর ছিল তাপপ্রবাহ। গরমের এই দীর্ঘ ‘স্পেল’ কলকাতায় বেশ বিরল। এমনকি, গত ৫০ বছরে এপ্রিল মাসে রাজ্যে গরমের এমন তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব একসঙ্গে খুব একটা দেখা যায়নি।
তীব্র গরমের এবং তাপপ্রবাহের কারণে পড়ুয়াদের রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাময়িক ভাবে ক্লাসে পঠনপাঠনে বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্লাস সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকবে।